আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার সময়, স্থান ও দাফন | Sayeedi janaja
মাওলানা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার সময়, স্থান ও দাফন কখন কোথায় হবে – এ ব্যাপারে এই পোস্টে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। তিনি একজন বাংলাদেশী ইসলামী পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য, যিনি ১২ জুন ১৯৯৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখ পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার সময়, স্থান ও দাফন
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামাজে জানাজা ১৫ আগস্ট ২০২৩ (মঙ্গলবার) বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ ঢাকায় জানাজার অনুমতি না দিয়ে লাশ পিরোজপুর পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতালের বাইরে অবস্থান নেওয়া অসংখ্য নেতাকর্মী এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ এক পর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সবশেষে জানাজার স্থান ও সময় নির্ধারণ করা হয় পিরোজপুর সদর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে, ১৫ আগস্ট ২০২৩ (মঙ্গলবার) বাদ জোহর।
এর আগে, ১৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখ রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান।
পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পিরোজপুর শহরে ‘আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন’ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে ফাউন্ডেশনের মসজিদের দক্ষিণ পাশে সাঈদীর বড় ছেলে মরহুম মাওলানা রফিক সাঈদীর কবরের পাশেই দাফন করা হবে।
সাঈদীর মৃত্যু / দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বর্তমান অবস্থা ২০২৩
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখ (সোমবার) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ
২৯ জুন ২০১০ তারিখে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাঈদীকে। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তিনি এই সাজা ভোগ করছিলেন। মৃত্যুর এক দিন আগে (১৩ আগস্ট ২০২৩) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এর জীবনী (সংক্ষিপ্ত) / Allama delwar Hossain Sayeedi biography
জন্ম : ১৯৪০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জন্মগ্রহণ করেন।
মৃত্যু : দীর্ঘ কারাবরণকালে ১৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০-এ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসকরা গণমাধ্যমকে জানান, তিনি হার্ট এটাক করে মৃত্যুবরণ করেছেন।
- পিতার নাম : ইউসুফ সাঈদী যিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত বা আলেম ছিলেন।
- মায়ের নাম : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মায়ের নাম গুলনাহার বেগম।
- আল্লামা সাইদীর সন্তান : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চার ছেলে- মরহুম রফিক সাইদী, শামীম সাইদী, মাসুদ সাইদী এবং নাসিম সাইদী
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর শিক্ষা জীবন
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন। কামিল পাশ করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান , রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি ,মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যায়ন করেন ।
ইসলাম প্রচারক হিসেবে ভূমিকা
১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ইসলাম প্রচারক হিসেবে হিসেবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন । মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সু-মহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। দেশে তাঁর ৫০ বছরের ইসলাম প্রচারের নমুনা সংক্ষেপে দেখুন:-
ক. চট্টগ্রাম প্যারেডগ্রাউন্ড ময়দানে প্রতি বছর ৫ দিন করে দীর্ঘ ২৯ বছর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
খ. খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানসহ শহরের বিভিন্ন মাঠে প্রতি বছর ২ দিন করে দীর্ঘ ৩৮ বছর তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
গ. সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ঘ. রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ঙ. বগুড়া শহরে প্রতি বছর ২দিন করে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
চ. ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে ময়দান ও পল্টন ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ছ. কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তিনদিন ব্যাপী প্রায় দীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিলঅনুষ্ঠিত হয়।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রাজনৈতিক জীবন
১৯৭৯ সালে তিনি ধর্মীয় রাজনীতিতে আসেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদচারণা
ক. ১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি আমন্ত্রনে রাজকীয় মেহমান হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হজ্জব্রত পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর রমজান মাস মক্কা মদীনায় থাকা তাঁর রুটিন হয়ে গিয়েছিল।
খ. ১৯৮২ সালে ইমাম সৈয়দ আলী হোসেনী খমিনির আমন্ত্রনে ইরানের প্রথম বিপ্লব বার্ষিকী উজ্জাপন উপলক্ষে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তেহরান সফর করেন । ১৯৯১ সালে সৌদি বাদশার আমন্ত্রনে কুয়েত – ইরাক যুদ্ধের মিমাংসা বৈঠকে তিনি যোগদান করেন । ১৯৯১ সালে ইসলামী সার্কেল অফ নর্থ অ্যামেরিকা তাকে “আল্লামা” খেতাবে ভূষিত করে।
গ. ১৯৯৩ সালে নিউইয়ার্কে জাতিসঙ্ঘের সামনে অ্যামেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে “গ্র্যান্ডমার্শাল“ পদক দেয়া হয় । দুবাই সরকারের আমন্ত্রনে ২০০০ সালের ৮ই ডিসেম্বর আরব আমিরাতে ৫০,০০০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি কোরআনের তাফসির পেশ করেন ।
ঘ. লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্ভধনি অনুষ্ঠানে কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম “শায়েখ আব্দুর রাহমান আস সুদাইসির” সাথে মাওলানা সাঈদী ও আমন্ত্রিত হন । মাওলানা সাঈদীর হাতে হাত রেখে ছয় শতাধিক অমুসলিম ভাই-বোন ইসলামের সুমহান আদর্শে দিক্ষিত হন।
সাঈদী সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য
- ১ম গ্রেপ্তার ও কারাবরণ : মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৫ সালে প্রথম কারাবরণ করেন।
- ২য় গ্রেপ্তার ও কারাবরণ : ২৮ জুন ২০১০। এখন কথিত যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যু দণ্ড এবং আপিলে যাবজ্জীবন জেল হওয়ায় তিনি জেল খানায় বর্তমান। তাকে ভালবেসে তার এই রায়কে কেন্দ্রকরে আন্দোলন ও প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে প্রায় ১৫০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
- হজ্বপালন : মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রতি বছর পবিত্র হজ্ব পালন করেন
- আল্লামা উপাধী : ১৯৯১ সালে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা কতৃক তিনি ‘’আল্লামা’’ উপাধিতে ভূষিত হন
- গ্রন্থ রচনাঃ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ৭৫টি গ্রন্থ রচনা করেন
- প্রিয় বক্তা : শায়খ আঃ হামিদ কিশক, আহমদ দীদাত এবং সৈয়দ কামাল উদ্দিন জাফরী
- প্রিয় লেখক : আল্লামা মওদুদী , হাসানুল বান্না ,ড. মুরিস বুকাইলি, মাঃ আঃ রহিম এবং কৃষাণ চন্দর
- প্রিয় কবি : শেখ সাদী ,ওমর খৈয়াম ডঃ ইকবাল ,কাজী নজরুল এবং ফররুখ আহমদ
- প্রিয় বন্ধু : অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ কামাল উদ্দিন জাফরী
- জীবনের আদর্শ পুরুষ : হযরত মুহাম্মদ সাঃ
তথ্য সূত্র : পত্রিকা ও অনলাইন থেকে সংগৃহীত