ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, কী কারণে হয়
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, কী কারণে হয়, ডেঙ্গু জ্বর কী? কখন ডাক্তার দেখাবেন? কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্যাপারে ডা. এম শাহাদাত হোসেন-এর বিস্তারিত আলোচনা ও পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো।
ডেঙ্গু জ্বর কী?
ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। আবার কখনোবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে।
পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। কয়েক ধরনের টেস্টের মাধ্যমে যেমন, ভাইরাসটি বা এর আরএনএ প্রতিরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি দেখেও ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যায়।
এই দশকের শুরুতেই ডেঙ্গু জ্বর আমাদের দেশে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে মানুষ হয়ে পরে আতংকগ্রস্ত। এমনকি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এবং পরিবার-পরিজন অনেকেই হয়ে পড়েন দিশেহারা। শত শত রোগীর রক্ত এবং রক্তের প্লাটিলেট জোগাড় করতে গিয়ে ব্লাড ব্যাংকগুলো রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছিল।
আর রক্ত বা প্লাটিলেট সংগ্রহ করার জন্য লোকজনও হয়ে উঠেছিল মরিয়া। এ সময়টাতে চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতাও ছিল সীমিত। ফলে পুরো জাতিই আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মিডিয়াতেও এর ব্যাপক প্রচার পায়। তবে বর্তমানে মানুষের ঐ ভীতি ও আতংক কেটে গেছে। ডাক্তাররা যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। জনগণও এর প্রতিকার ও প্রতিরোধে যথেষ্ট সচেতন।
কীভাবে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে?
ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক অ্যাডিস ইজিপটি নামক মশা। এ ছাড়া অ্যাডিস অ্যালবপটিকাস দিয়েও এ রোগের বিস্তার হয়। অ্যাডিস নামে মশাগুলো অন্যান্য মশার চেয়ে বড় এবং গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে। এরা বৃষ্টি-পরবর্তী সময়ে যেকোনো জলাবদ্ধ এলাকায় বংশবিস্তার করে। তা ছাড়া ঘরে রাখা টব বা ফুলদানির পানিতেও এরা বংশবিস্তার করে।
এদের ডিম ফোটার জন্য পানির প্রয়োজন হয় বলে শুকনো মওসুমে এ মশা কমে যায়। যেকোনো অ্যাডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয় না যে মশা জীবাণু বহন করে, শুধু সেসব মশার কামড় থেকেই ডেঙ্গু হতে পারে। এ মশা দ্বারা রোগ বিস্তারের আরেকটি অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলো সাধারণত দিনের বেলায় অ্যাডিস মশা কামড়ায় এবং ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ হয় দিনের বেলায়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়।
এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার।
ডেঙ্গু জ্বর কখন ও কাদের বেশি হয়?
মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশেষ করে গরম এবং বর্ষার সময়টাতেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতকালে এই জ্বর হয় না বললেই চলে। শীতে লার্ভা অবস্থায় ডেঙ্গু মশা অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষার শুরুতেই সেগুলো থেকে নতুন করে ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত মশা বিস্তার লাভ করে। সাধারণত শহর অঞ্চলে অভিজাত এলাকায় বড় বড় দালান কোঠায় এই মশার প্রাদুর্ভাব বেশি তাই ডেঙ্গু জ্বরও এই এলাকার বাসিন্দাদের বেশি হয়।
বস্তিতে বা গ্রামে বসবাসরত লোকজনের ডেঙ্গু কম হয় বা একেবারেই হয় না বললেই চলে। ডেঙ্গু ভাইরাস ৪ ধরনের হয়ে থাকে। তাই ডেঙ্গু জ্বরও ৪ বার হতে পারে। যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ (Dengue symptoms))
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মশাবাহিত এ রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা না হলে, মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এই করোনাকালে কারও জ্বর হলেই ভেবে নেন করোনা হয়েছে! শুধু করোনায় আক্রান্ত হলেই তো রোগী জ্বরে ভোগেন না বরং ডেঙ্গুর কারণেও জ্বরে ভুগতে পারেন।
তাই এ সময় জ্বর হলেই উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে ডেঙ্গুর কিছু লক্ষণ আছে সেগুলো জানা থাকলে নিজেই নির্ণয় করতে পারবেন আপনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন কি-না।
জেনে নিন ডেঙ্গুর জ্বরের লক্ষণগুলো :
১। ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বরসমূহ :
- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে।
- জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে।
- শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়।
- এ ছাড়াও মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
- এই জ্বরের আরেক নাম ব্রেক বোন ফিভার।
- জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো।
- পাশাপাশি বমি বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
- রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে ও রুচি কমে যায়।
- সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায়। কারও ক্ষেত্রে ২ বা ৩ দিন পর আবারও জ্বর আসে। যাকে বাই ফেজিক ফিভার বলে।
২। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরসমূহ :
রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-
- শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
- এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৩। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমগুলোঃ
ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণগুলো হলো
- রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
- নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
- শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
- শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
- প্রস্রাব কমে যাওয়।
- হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তীব্র ডেঙ্গু কী করে বুঝবেন
করোনার উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে এই বর্ষায় ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ। মৃত্যুও হচ্ছে অনেক। ডেঙ্গুও করোনার মতো ভাইরাসজনিত রোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর লক্ষণ তেমন প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের একজনের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয়। কারও হয় মৃদু, কারও মধ্যে দেখা দেয় ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ রোগের মতোই। জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে বিশেষত চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ইত্যাদি হলো ডেঙ্গুর লক্ষণ।
তবে জ্বর, মাথাব্যথা এবং শরীরে ছোপ ছোপ দাগ—এই তিন ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। এসব লক্ষণ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদচিহ্নগুলো হলো তীব্র পেটব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, কিছু খেতে না পারা, নাক ও দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা কিংবা খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, অসংলগ্ন কথাবার্তা, তাপমাত্রায় বিশাল তারতম্য। জ্বর থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়া, চার–ছয় ঘণ্টা ধরে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা না হওয়া, হাত–পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০ শতাংশ কমে যাওয়া এবং লিভার বড় হয়ে যাওয়া।
ডেঙ্গুর লক্ষণ তীব্র হলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। এমন রোগীদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নিতে হবে। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। দ্রুত রক্তের অণুচক্রিকা (প্লাটিলেট) কমে যেতে পারে। সাধারণ ডেঙ্গুর কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা নেই। কারও ডেঙ্গু হলে করণীয়, পূর্ণ বিশ্রাম,পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান। শরবত, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন পান, জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা–বেদনানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর সেরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তবে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে, রক্ত পরীক্ষা করে অণুচক্রিকার এবং হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিতে হবে, রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং অণুচক্রিকা ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে কিংবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত দিতে হবে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদিও ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই জ্বর সাধারণত নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-
- শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে।
- প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।
- শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
- জন্ডিস দেখা দিলে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
- প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
ডেঙ্গুর মৃত্যু ঝুঁকি
ক) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। আর যদি হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের রোগ থাকলে যদি ডেঙ্গুজ্বর হয় তবে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। তার কারণ হাঁপানি রোগীদের ডেঙ্গু হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
খ) ডেঙ্গু ভাইরাসের সঙ্গে নিউমোনিয়ার জীবাণুর সংক্রমণ হলে রোগীর অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। ডেঙ্গু জ্বরে প্লেটলেট কাউন্ট কমতে শুরু করায় শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। একই সঙ্গে সিভিয়ার ডেঙ্গু হলে ক্যাপিলারি (রক্তজালিকা) লিকেজ হয়ে ফুসফুসের অ্যালভিওলাইতে পানি জমতে পারে।
গ) এ সময় পানি জমার কারণে রোগীর ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হয়। বিশেষ করে যাদের ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ আছে তাদের এই অসুবিধার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় বেশি। এই সময়ে রেসপিরেটরি ফেলিওর, অর্থাৎ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এই অবস্থায় রোগীকে সাময়িক ভাবে ভেন্টিলেটরে রেখে স্থিতিশীল না করলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।
ঘ) সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছে ডেঙ্গুর উপসর্গ। যে কারণে ডেঙ্গুজ্বর অনেক সময় মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনে। এ সময় দ্রুত চিকিৎসা না নিলে ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। ডেঙ্গুর আক্রমণ হলে ফুসফুসের জটিলতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই শুরুতেই সাবধান হতে হবে। হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলেই সতর্ক হন। তাই সর্দি-কাশি, কাশির সাথে বুকে ব্যথা, কফ ওঠা এবং শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
- https://www.nhs.uk/conditions/dengue/
- https://www.cdc.gov/dengue/symptoms/index.html
- https://www.webmd.com/a-to-z-guides/dengue-fever-reference
- https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/dengue-and-severe-dengue
- https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/dengue-fever/symptoms-causes/syc-20353078
- https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/17753-dengue-fever
- https://en.wikipedia.org/wiki/Dengue_fever
- https://kidshealth.org/en/parents/dengue.html
- https://www.moh.gov.sg/diseases-updates/dengue