শ্রীপুরের স্বচ্ছ পানির চিংড়ি খাল এখন শুধুই স্মৃতির প্রতীক

দখল-দূষণে মৃত্যুর মুখোমুখি

Rate this post
এ এইচ সবুজ, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ও মাওনা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে একসময় প্রবাহিত হতো স্বচ্ছ পানির ‘চিংড়ি খাল’। প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল এক সময় ছিল এলাকার কৃষি ও মৎস্য সম্পদের প্রাণ। চিংড়ি মাছের প্রাচুর্যের কারনেই খালটি ‘চিংড়ি খাল’ নামে পরিচিতি পায়।
তবে সময়ের বিবর্তনে সেই ‘চিংড়ি খাল’ এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন। বর্তমানে চিংড়ি ব্রিজ-সংলগ্ন মাত্র ৫০০ মিটার অংশে কিছুটা পানির প্রবাহ দেখা যায়। বাকি অংশ দখল ও ভরাট হয়ে রূপ নিয়েছে সবুজ ফসলি জমিতে।
উপজেলার নিজ মাওনা গ্রামের প্রবীণ সরাফত আলী বলেন,ছেলে বেলায় বাবার সঙ্গে এই খালে মাছ ধরতে যেতাম। পানিটা এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে, অনেকে তা পানও করতো। এখন খুঁজলেও খালের অস্তিত্ব মেলে না। স্থানীয় আইনুদ্দিন ফকির বলেন, ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকেই প্রভাবশালীরা খাল দখল শুরু করে। এক সময় যেখান দিয়ে পানির প্রবাহ বয়ে যেত, এখন সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে। খাল নেই, মাছ নেই, বর্ষায় এলাকা প্লাবিত হয়।
রোকেয়া খাতুন নামের একজন বলেন, ছোটবেলায় আমরা এই খালেই গোসল করতাম। বাবাও খাল থেকে মাছ ধরে আনতেন। এখনো যেটুকু খাল আছে, তাতে পানি স্বচ্ছই আছে কিন্তু সেটা খুবই অল্প।
চিংড়ি খালের পথ গাজীপুর ইউনিয়নের কপাটিয়া পাড়া, নিজ মাওনা, আক্তারপাড়া এবং মাওনা ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে সালদহ নদী পর্যন্ত। তবে এক সময়কার প্রবাহমান খাল এখন শুধুই স্মৃতির প্রতীক।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালীরা বছরের পর বছর ধরে খালটি দখল করে কৃষি জমিতে রূপান্তর করেছেন। এতে একদিকে যেমন পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যদিকে বর্ষায় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।
খালপাড়ের বাসিন্দা জসিমউদ্দিন বলেন, খাল ভরাটের কারণে অতিবৃষ্টিতে বসতঘর তলিয়ে যায়। খালটি উদ্ধার করা না হলে সমস্যা আরো বাড়বে।
নানিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, দুই বছর আগে সীমানা নির্ধারণ করে লাল নিশান টানানো হয়েছিল। তখন মনে আশা জেগেছিল কিন্তু এরপর আর অগ্রগতি হয়নি। খাল উদ্ধার হলে কৃষিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘নদী পরিব্রাজক দল’ শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, চিংড়ি খাল ছিল এই অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের প্রাণ। দখল ও দূষণের হাত থেকে এই খাল রক্ষা করতে হবে। এটি শুধু একটি খাল নয়, আমাদের পরিবেশগত ভারসাম্যের অংশ।
শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চিংড়ি খালের মোট আয়তন ১১ একর ২ শতাংশ। এর বড় একটি অংশ দখলদারদের কবলে পড়েছে।
এ বিষয়ে সার্ভেয়ার (ভূমি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, দুই বছর আগে খালের সীমানা চিহ্নিত করে লাল নিশান টানানো হয়। এটি ছিল খাল উদ্ধার কার্যক্রমের অংশ।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, নদী ও খাল উদ্ধার নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। চিংড়ি খালের দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকা প্রকাশ করে শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

এডু ডেইলি ২৪

Education, News and Information-based portal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *