কবিতা

কবিতা : সময়ের উপলব্ধি

করোনা আরও একবার দেখিয়ে দিল,
কতো ঠুনকো নড়বড়ে এ জীবন!
পদ্মপাতার পানি বা শৈবালের শিশিরের মতো, আবার কর্পূরের মতো উদ্বায়ীও।
শরীর নামের ইঞ্জিনটা আণুবীক্ষণিক ত্রুটিতে মুহূর্তেই অকেজো হয়ে পড়ে,
এক নিমিষে নীরব হয়ে যায় কোলাহলের সব আয়োজন।

করোনা আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেল,
টাকা-পয়সা, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, বাগ্মিতা সবই নস্যি চিরন্তন মৃত্যুর কাছে,
চারপাশের সব অহংকার, দম্ভ, পান্ডিত্য আর লোক দেখানো সবই নিরর্থক দিনশেষে,
বাস্তবতা জীবনের দুয়ারে কড়া নাড়লে ভুলে যাই,
প্রিয়জন, প্রিয়মুখ বা ভালোবাসাদের কথা।

চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ,
কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা কার কতোটা বেশি!
প্রকৃতির কাছে আমরা কতো নিঃস্ব, রিক্ত, কতো পরাজিত!
ঠিক জীবন যেমন মৃত্যুর কাছে, আঁধার আলোর কাছে,
অনল জলের কাছে।
প্রকৃতির প্রতিশোধে শিকারি ঘরে বন্দী আর শিকার স্বাধীন ঘুরে।

প্রতিবাদের ভাষায় চিৎকার করে বলে গেল,

ঐ সৃষ্টিকর্তা সব দেখে, কিছুও বাদ যায়না হিসেবের খাতায়,
প্রকৃতিও সব অন্যায় তুলে রাখে মনের পাতায়,
সহ্যের সীমা যখন ছাড়ায়, অন্যায়ের স্তুপ যখন পর্বতসম হয়ে দাঁড়ায়,
তখন সব হিসেব চুকানোর সময় এসে যায়।

মৃত্যুকে কাছ থেকে চিনিয়ে গেল,
মৃত্যুর মিছিলে কোন ধর্ম নেই, ধনী গরিবের ভেদাভেদ নেই, দেশ কালের সীমানা নেই।
সবার জন্য একই ভয়, একই আতঙ্ক, একই হারানোর কান্না।
কোন কিছুই কমাতে পারে না ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

করোনাও একদিন চলে যাবে শুধু কিছু প্রশ্ন রেখে..
কতোটুকু দেখলাম, বুঝলাম বা কী?
শিখলাম কি কিছু?
ধরণীর বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ পৌঁছুবে আমাদের কানে?
অন্যের ক্ষুধার যন্ত্রণা টের পাব!
আবারও কি ক্ষমতার দম্ভে অন্যকে হীন করব?
নিজের স্বার্থে বারবার অন্যকে ঠকাব ?
নিচু জাত উঁচু জাত করে, ধর্মের দোহাই দিয়ে
লোভের ফাঁদে পড়ে আবারও কি রক্তের খেলায় মেতে উঠব ?
উত্তর না পেলে করোনারা আবার আসবে,
বারবার আসবে…..হয়তো ভিন্নরূপে ভিন্ন সময়ে।
তাদেরও যে কিছু দায় আছে সৃষ্টিকর্তার কাছে।

কবি পরিচিতি :
মাহামদুল হাসান পারভেজ
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

মাহামদুল হাসান পারভেজ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,
মাহামদুল হাসান পারভেজ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button