যেসব পশু-পাখি খাওয়া হালাল ও হারাম তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ্ মানবজাতির জন্য কোনটি কল্যাণকর আর কোনটি অকল্যাণকর তা নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে মাছ ব্যতীত অন্যান্য মৃত প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা হারাম। এছাড়াও কিছু হিংস প্রাণী যেমন শুকর, কুকুর, বিড়াল, সিংহ, চিতা ও বাঘ ইত্যাদির গোশত ভক্ষণ করাও হারাম। আমরা বুঝি বা না বুঝি, এসব প্রাণীর গোশত মুনষের জন্য অকল্যাণকর। তাই এসব প্রাণীর গোশত মানুষের জন্য হারাম করা হয়েছে। কিতাব হিদায়া, বাদাই উস সানাই এবং রাদ্দুল মোহ্তার সূত্রে কোন কোন প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা হালাল ও হারাম, এই মূলনীতি নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. কিছু কিছু প্রাণী যেমন শুকর, গৃহপালিত গাধা, মৃত প্রাণীর গোশত, প্রাণীর রক্ত ইত্যাদিকে সরাসরি কোরআন ও হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। সুরা মায়েদা-এর ৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'মৃত প্রাণীর গোশত, রক্ত এবং শুকরের গোশত তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে'।
২. মাছ ব্যাতীত সকল জলজ প্রাণী খাওয়া হারাম। প্রাকৃতিকভাবে মারা যাওয়া মাছ খাওয়াও হারাম। তবে বাহ্যিক কারণ যেমন ঠাণ্ডা, গরম, পাথরের আঘাত ও পানির ঝাপটায় মারা যাওয়া মাছ খাওয়া হালাল।
৩. যেসব স্থলচর প্রাণীর রক্ত নেই বা রক্ত সাদা সেসব প্রাণী যেমন ভিমরুল, মাছি, মকড়সা, গোবরে পোকা, বিচ্ছু, পিঁপড়া ইত্যাদি খাওয়া হারাম। 'তিনি (আল্লাহ্ তায়ালা) তাদের (মানুষের) জন্যে পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করে দিয়েছেন এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তুকে তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন'। সুরা আরাফ, আয়াত নম্বর ১৫৭।
৪. যেসব প্রাণীর রক্ত প্রবাহিত হয় না (বা শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী) যেমন সাপ, গিরগিটি, টিকটিকি, রক্তচোষা, গুইসাপ ইত্যাদি খাওয়া হারাম।
৫. ইঁদুর এবং ইঁদুর জাতীয় প্রাণী ভক্ষণ করা হারাম। কারণ এগুলোর মাংস মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
৬. যেসব উষ্ণরক্তবিশিষ্ট স্থলচর তৃণভোজী প্রাণী (যারা ঘাস, লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে), অন্য প্রাণী শিকার করে না, সেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল। যেমন- উট. গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, খরগোশ ইত্যাদি। এছাড়াও হানাফি মাজ্হাব অনুসারে ঘোড়ার গোশত খাওয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালাল। তবে এসবের মধ্যে গৃহপালিত গাধা অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ, গৃহপালিত গাধার মাংস হারাম। তবে কারো কারো মতে বন্য গাধার গোশত খাওয়া হালাল।
সুরা নাহ্ল-এর ৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'তিনি (আল্লাহ) চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্যে এতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহুবিধ উপকার রয়েছে এবং এসব থেকে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক'। সুরা মুমিনের ৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'আল্লাহই তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, এর মধ্যে কিছু জন্তুতে তোমরা আরোহণ করে থাকো এবং কিছু আহারও করে থাকো'। ঘোড়ার মাংস ভক্ষণের ব্যপারে যতদূর জানা যায়, যেহেতু ঘোড়া যুদ্ধের (জিহাদ) কাজে ব্যবহৃত হয় সেহেতেু এর সম্মানার্থে অনেকে খায় না। তবে ইমাম আবু ইউসুফ এবং ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) একে হালাল বলে মত দিয়েছেন। ঘোড়ার মাংস খাওয়া ক্ষেত্রবিশেষে হালাল হলেও পারতপক্ষে না খাওয়াই উত্তম। সুরা নাহল-এর ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'তোমাদের আরোহণের জন্যে ও শোভার জন্যে তিনি (আল্লাহ) ঘোড়া, খচ্ছর, গাধা সৃষ্টি করেছেন'। হজরত আবু তালাবা (রাযি.) বলেছেন, 'হজরত মুহাম্মদ (সা.) গাধার মাংস খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন'।
৭. যেসব হিংস্র ও শিকারী প্রাণী দাঁত ও থাবা দ্বারা শিকার করে সেসব প্রাণী যেমন- সিংহ, চিতা, বাঘ, নেকড়ে, হায়েনা, শিয়াল, কুকুর, বিড়াল, ইত্যাদির মাংস খাওয়া হারাম ।
৮. যেসব শিকারী পাখি থাবা বা নখর দিয়ে শিকার করে সেসব পাখি যেমন- ঈগল, চিল, শকুন, কাক, পেঁচা, বাঁজ পাখি ইত্যাদির মাংস ও ডিম খাওয়া হারাম। আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'সকল লম্বা ছেদন ও বিষদাঁতবিশিষ্ট শিকারী প্রাণী এবং থাবা বা লম্বা তীক্ষ্ন ঠোঁট ও নখরবিশিষ্ট শিকারী পাখির মাংস খাওয়া নিষেধ'। সহিহ মুসলিম শরিফ, ১৯৩৪।
৯. অন্যদিকে যেসব পাখি থাবা দিয়ে শিকার করে না, বরং শস্যদানা, ফসল ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে তাদের গোশত খাওয়া হালাল। যেমন- কবুতর, হাঁস, মুরগী, হুদহুদ, বক, সারস, চড়ুই, ঘুঘু, ময়ুর, তিতির, কোয়েল, রাজহাঁস, পানকৌড়ি ইত্যাদি।
১০. যদি কোনো পশু-পাখি পচা গলা খাবার খায় এবং তাদের মাংসে ও দুধে ঐ দুর্গন্ধ চলে আসে তবে তাদের মাংস ও দুধ খাওয়া মাকরুহ। কিন্তু পচা গলা খাবার খাওয়ার পরেও যদি ঐসব পশু-পাখির মাংস ও দুধ থেকে দুর্গন্ধ না আসে তাহলে তাদের মাংস ও দুধ খাওয়া হালাল। সূত্র : রাদ্দুল মুহ্তার, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৪০।
হালাল-হারাম সম্পর্কিত কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রণীত মূলনীতি অনুসারে যেসব পশু পাখির গোশত খাওয়া হালাল তা হলো- উট, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, খরগোশ, গরু (বন্য গরুসহ), বন্য গাধা, হাঁস, মুরগী, তিতির, হুদহুদ, রাজহাঁস, বক, সারস, উটপাখি, ময়ুর, চড়ুই, কোয়েল, ঘুঘু, কবুতর, পানকৌড়ী এবং মাছ (চিংড়িসহ), ইত্যাদি। যেসব পশু-পাখির মাংস খাওয়া হারাম তা হলো- শুকর, হায়না, নেকড়ে, কুকুর, বিড়াল, বানর, চিতা, সিংহ, বাঘ, জারবয়া, ভাল্লুক, সাপ, কাঠ বিড়ালী, কচ্ছপ, বেজী, শিয়াল, গৃহপালিত গাধা, হাতি। সূত্র : রাদ্দুল মুহ্তার, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩০৬। ইঁদুর, ব্যাঙ, গুইসাপ, গিরগিটি, শকুন, বাঁজ, চিল, বাদুর, ঈগল, পেঁচা, কীটপতঙ্গ যেমন- মশা, মাছি, বিচ্ছু, বোলতা, মাকড়সা এবং মাছ ব্যাতিত অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী যেমন- অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক, হাঙ্গর, শীল, কুমির ইত্যাদি।
কেন বিভিন্ন পশু পাখিকে খাবারের জন্য হালাল এবং হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, এসব বিষয়েও জীববিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণা কর্ম পরিচালনা করেছেন। তাদের গবেষণা কর্ম এখনো অব্যাহত আছে। স্থান কাল পাত্র ভেদে সেসব গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের জীবনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয় বলেই নির্দিষ্ট পশুপাখি ভক্ষণ হারাম এবং বাকিগুলো নানাবিধ উপকার ও প্রয়োজন বিবেচনায় হালাল ঘোষণা করা হয়েছে।
যেসব পশু-পাখি খাওয়া হালাল ও হারাম
Connect With Us:
Advertisement
Our Editorial Standards
We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.
Fact-Checked
This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.
Expert Review
Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.
Regularly Updated
We regularly update our content to ensure it remains current.
Unbiased Coverage
We strive to present balanced information.