বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে নদী ব্যবস্থাপনায় চীনের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রযুক্তি এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি মধ্য চীনের উহানে অনুষ্ঠিত ২০২৫ গ্রেট রিভারস ফোরাম-এ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।
শুক্রবার এক উপ-ফোরামে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সিস্টেম সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক লু হুই পাহাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল প্রযুক্তির নতুন প্রয়োগ তুলে ধরেন। তিনি জানান, চীনে প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার পাহাড়ি বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে, যেখানে পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নেই।
লু একটি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আগাম সতর্কতা প্ল্যাটফর্ম উপস্থাপন করেন, যা রাডার, স্যাটেলাইট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রবল বর্ষণ শনাক্ত, বন্যার গতিপ্রকৃতি অনুকরণ এবং সময়মতো সতর্কবার্তা প্রদান করতে সক্ষম। এই ব্যবস্থা ২০২৩ সালে বেইজিংয়ের ভয়াবহ বর্ষণে সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল, যা নিখুঁত পূর্বাভাস দেয় এবং জরুরি সাড়া প্রদানে কাজে আসে।
লু জানান, ড্রোন ব্যবহার করে মাত্র এক মাসে বেইজিংয়ের ১৪০টিরও বেশি বন্যা-প্রবণ গিরিখাতের সুনির্দিষ্ট মডেলিং সম্পন্ন হয়েছে।
ফোরামে মালয়েশিয়ার ইউনেস্কো হিউমিড ট্রপিকস সেন্টারের পরিচালক রত্না রাজাহ বলেন, মালয়েশিয়ায় গড়ে বছরে ৩,০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তিনি জানান, আগে যেখানে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি তিন ঘণ্টায় হতো, এখন তা এক ঘণ্টার মধ্যেই হচ্ছে। এতে চাপে পড়ছে দেশটির ড্রেনেজ ব্যবস্থা। তিনি উহানের ‘স্পঞ্জ সিটি’ মডেল নিয়ে গবেষণার আগ্রহও প্রকাশ করেন।
ফোরামে নদী শাসনের ডিজিটাল রূপান্তর নিয়েও আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক জল-পরিবেশ প্রকৌশল ও গবেষণা সমিতির সভাপতি ফিলিপ গুরবসভিল চীনের ইয়াংসি ও হলুদ নদীর ডিজিটাল টুইন সিস্টেমে মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, এই প্রযুক্তি নীতিনির্ধারকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।
এ ছাড়া ইয়াংজি নদী জাতীয় সাংস্কৃতিক উদ্যানের নির্মাণকাজে এআর, ভিআর ও এআই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক ওয়াটার ফোরামের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ার উ চাংহুয়া বলেন, ‘নদী ব্যবস্থাপনা কখনো এককভাবে করা উচিত নয়। আমাদের পরস্পরের কাছ থেকে শেখার আছে এবং এ অভিজ্ঞতাগুলো বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
লিখেছেন: ফয়সল আবদুল্লাহ
সূত্র: সিএমজি বাংলা