বিশ্বে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নেটওয়ার্ক আরও বেড়েছে। এ বছর নতুন করে ১৫টি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এবং একটি কনফুসিয়াস ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো আছে ১৪টি দেশে। আলজেরিয়া ও গিনি-বিসাউতে প্রথমবারের মতো চালু হলো কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট।
শনিবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ কনফারেন্সের এক সাব-ফোরামে ১০টি নতুন প্রতিষ্ঠানের কাছে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের স্মারক ফলক তুলে দেওয়া হয়। ইনস্টিটিউটটির ২১ বছরের যাত্রা ও অর্জন উদযাপন করা হয় সেখানে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বে মোট কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১০টি। এগুলো ১৬৪টি দেশ ও অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আন্তর্জাতিক চীনা ভাষা শিক্ষা ও জনগণের মধ্যে বিনিময় বাড়াতে এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আলজেরিয়ার ইউনিভার্সিটি অব আলজিয়ার্স–২–এর ভাইস রেক্টর আসিয়া কাসেদ বলেন, আলজেরিয়ায় চীনা ভাষা শেখার বড় চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। তিনি বলেন, আলজেরিয়া–চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়া এবং দেশে বড় চীনা কোম্পানির উপস্থিতির কারণে এ আগ্রহ আরও বেড়েছে। তরুণদের জন্য চীনা ভাষা এখন নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলছে। কাসেদ জানান, নতুন ইনস্টিটিউট শুধু ভাষা শিক্ষা নয়, দুই দেশের তরুণদের মধ্যে ভুল ধারণা দূর করতে এবং পারস্পরিক আস্থা গড়তে সহায়তা করবে। কেনিয়ার এগারটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর আইজাক ওঙ্গুবো কিবোয়াজে জানান, তাদের দেশের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট একটি ব্যতিক্রমী মডেল।
এটি ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তি স্থানান্তরের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বে এটিই প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, যেখানে কৃষিবিষয়ক জ্ঞান দেওয়া হয়। চীনা ভাষা শেখার সঙ্গে আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় সেখানে। তিনি জানান, ইনস্টিটিউটটি আটটি শিক্ষাকেন্দ্র চালায় এবং বছরে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এখন পর্যন্ত ৪৫টি কৃষি প্রশিক্ষণ আয়োজন করে ২ হাজার ৪১৩ জন কৃষককে সহায়তা দিয়েছে। চীনের চিয়াংসু প্রদেশের নানচিং অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সহযোগিতায় যৌথ ল্যাব ও ডেমোনস্ট্রেশন ভিলেজ গড়ে তোলা হয়েছে।
এটি দুই দেশের জ্ঞান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রতীক বলে তিনি মনে করেন। চীনের উপ-শিক্ষামন্ত্রী রেন ইয়োকুন বলেন, ২০ বছরের উন্নয়নের পর কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এখন বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদান পদ্ধতি ও মান আরও উন্নত করতে হবে। সুযোগ থাকলে চীনা ভাষা বিষয়ে পৃথক কোর্স চালুর কথাও বিবেচনা করা উচিত। চীনা ভাষা শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ানো এবং শিক্ষক–শিক্ষার্থী–মেশিনের সমন্বিত নতুন মডেল তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে চীনা কোম্পানির চাহিদা এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার লক্ষ্য অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে চীন ও অন্যান্য দেশের বাস্তব সহযোগিতা আরও এগিয়ে যাবে। বেইজিং ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট দুআন পেং বলেন, সারা বিশ্বের তরুণদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়াতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতি বছর প্রায় ১০০ জন শিক্ষক এবং আরও ১০০ স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে থাকে, যা বিদেশের ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষক সংকট দূর করতে সহায়তা করে। ফয়সল/নাহার তথ্য ও ছবি: চায়না ডেইলি বেনিনের কোতোনৌ শহরে ইউনিভার্সিটি অব আবোমে-ক্যালাভির কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা প্রথাগত চীনা পোশাক পরে অংশ নিয়েছিলেন ‘চায়না-বেনিন ফ্যাশন শো’য়।