আমের রাজধানী কোথায়, কোন জেলায় বেশি আম উৎপাদিত হয়

বাংলাদেশে আমের রাজধানী কোথায়, কোন কোন জেলায় সবচেয়ে বেশি হয়, এসব অনেকের কাছেই অজানা। ফলের রাজা আম। বাংলাদেশে আমের রাজধানী বলা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জকে। তবে নওগাঁ আপ উৎপাদনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাছাকাছি। কোনো কোনো বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়েও নওগাঁয় বেশি আম উৎপাদিত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত মোট আমের সিংহভাগই উৎপাদিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

কৃষি বিভাগ জানায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ই উৎপাদিত হয় প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন।

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম হলেও এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে আম চাষ ও উন্নত বিপণন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় সম্ভাবনা থাকার পরও বিদেশে পর্যাপ্ত আম রফতানি হচ্ছে না। অথচ এসব সমস্যার সমাধান করা হলে উৎপাদিত আম বিদেশে রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে আম

বাংলাদেশে যেসব ফল উৎপন্ন হয় তার মধ্যে আমের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আমের নানাবিধ ব্যবহার, স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমাণের জন্য এটি একটি আদর্শ ফল হিসেবে পরিচিত। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু, আবহাওয়া সবই আমচাষের উপযোগী। দেশের প্রায় সব জেলায়ই আম ফলে। এমনকি উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের চাষ হচ্ছে। পার্বত্য জেলার জুমচাষ এলাকায়ও উন্নত জাতের আম ফলছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা,সাতক্ষীরা, যশোর আমচাষের শীর্ষে অবস্থান করছে।


পরিসংখ্যান বিভাগের এক হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩২ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ৭৮ হাজার ১৯৫ একর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর ফলন হচ্ছে আট লাখ দুই হাজার ৭৫০ টন। বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। আর আমচাষের এলাকা তো প্রতিবছরই বাড়ছে। উৎপাদনও বাড়ছে। আর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের মাথাপিছু আম উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কেজির মতো। ভারতে মাথাপিছু ১১ কেজি, পাকিস্তানে ৬ কেজি, মেলঙ্কাতে ৯ কেজি, ফিলিপাইনে ৬ কেজি, তানজানিয়ায় ৭ কেজি, সুদানে সাড়ে ৭ কেজি, জায়ারে ৫ কেজি এবং হাইতিতে ৫৫ কেজি।

বিভিন্ন জাতের আম

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে আগে ওঠে গোপালভোগ। তারপর ওঠে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত আম। এরপর ল্যাংড়া। গাছপাকা ল্যাংড়া আম, দুধ দিয়ে চটকে খেলে এর সুঘ্রাণ হাতের তালুতে লেগে থাকে সারা দিন। এভাবে একের পর এক উঠতে থাকে ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিভোগ, রানিপছন্দ, সিন্দুরা, সুবর্ণরেখা, কুয়াপাহাড়ি, নাকফজলি, ফজলি, চিনি ফজলি, সুরমাই ফজলি, চিনি মিসরি, জগৎমোহিনী, রাখালভোগ, রাঙাগুড়ি, গোবিন্দভোগ, তোতাপুরী, মিশ্রিকান্ত, জালিবান্ধা, বোম্বাই, ভুতো বোম্বাই, পাহাড়িয়া, গোলাপখাস, কাকাতুয়া, দাদভোগ, চম্পা, সূর্যপুরী, কাঁচামিঠা, কলামোচা, শীতলপাটি, লক্ষ্মণভোগ, গোলাপবাস, কিষানভোগ বান্দিগুড়ি, রাংগোয়াই, আশ্বিনা, ভাদুরিগুটি, বনখাসা, বউ ফুসলানি, ক্ষীরমণ, দুধসর, রঙভিলা, পারিজা, আনোয়ারা, দিলশাদ, আম্রপালি, মল্লিকা, বেগমবাহার, পূজারীভোগ, পলকপুরী, রাজলক্ষ্মী, দুধকুমারী ইত্যাদি।

আম বাজার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রয়েছে অনেক আম বাজার। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে মহানন্দা নদীর ধারে পুরাতন বাজার, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর বাজার ও শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজার অন্যতম ৩টি বড় বাজার। কানসাট হচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় আম বাজার। এখানে রয়েছে ছোট বড় প্রায় ২৫০টি আমের আড়ত।

কোন জেলায় বেশি আম উৎপাদিত হয়

আম উৎপাদনের পরিমাণে কোন জেলা সবার ওপরে, এ প্রশ্ন করা হলে আপনার মাথায় সম্ভবত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামটি আসবে। তবে সরকারি হিসাব বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই একচ্ছত্র আধিপত্য আর নেই। ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হয়েছিল রাজশাহী বিভাগেরই আরেক জেলা নওগাঁয়। ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় মোটামুটি তিন লাখ টনের মতো আম উৎপাদিত হয়। সামান্য হেরফেরেই এক জেলা আরেক জেলাকে ছাড়িয়ে যায়। যেমন ২০২০ সালে নওগাঁয় প্রায় ৩ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদন ছিল ২৫ হাজার টনের মতো কম।

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24
Edu Daily 24

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.