চীনের আমদানি মেলা: বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অংশীদারত্বে নতুন দিগন্ত

চীনের আমদানি মেলা: বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অংশীদারত্বে নতুন দিগন্ত
নভেম্বর ১৯, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: ৫ থেকে ১০ নভেম্বর চীনের শাংহাইতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অষ্টম চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপো বা সি আই আই ই। এবারের মেলায় এসেছিল ১৫৫টি দেশ ও অঞ্চলের অংশগ্রহণকারীরা। ফরচুন ফাইভ হানড্রেড কোম্পানির ২৯০টি প্রতিষ্ঠানই ছিল এ মেলায়। প্রদর্শনী এলাকা এবং অংশগ্রহণকারী কোম্পানির সংখ্যায় রেকর্ড গড়া এবারের আয়োজনে ছিল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, খাবার, খেলনাসহ নানা খাতের বিশ্বসেরা অত্যাধুনিক সব পণ্য। ৫ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এবারের এক্সপোতে অংশ নেয় ৪৩টি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ও ৭০০-রও বেশি উপ-প্রতিনিধিদল। বিশেষ ‘বায়ার্স জোন’-এ ছয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় প্রায় দুই হাজার ব্যবসায়িক বৈঠক। প্রদর্শনীতে অংশ নেয় ৬৭টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার আয়তন ছিল ৩০ হাজার বর্গমিটার। এখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রায় ১০০টি ভিন্নধর্মী ইভেন্ট। আর এ আয়োজন ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহের ব্যারোমিটার ছিল আকাশছোঁয়া। নিউজিল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী টড ম্যাকক্লে বলেন, ‘এবার ৮০টি কোম্পানি এনেছি, পরেরবার ১০০ বা তারও বেশি কোম্পানি নিয়ে আসব। চীনা বাজার সম্পর্কে জানার জন্য এটি নিউজিল্যান্ডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দারুণ সুযোগ।’ ব্যবসায়িক প্রদর্শনী অংশে ৪৬১টি নতুন পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা আত্মপ্রকাশ করে, যার মধ্যে ২০১টি দেখা গেছে প্রথমবার। চীনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সুচৌ পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির কার্বন হ্রাস ইনক্লুসিভ সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ওয়াং চুনতোং জানালেন, ‘এই এক্সপোতে আমরা একটি বিদেশি এয়ারকন্ডিশনার নির্মাতার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আগামী তিন বছরে আমরা তাদেরকে ৫০ হাজার টন কার্বন নির্গমন হ্রাসে সহায়তা করব এবং শূন্য-কার্বন কারখানা স্থাপনের লক্ষ্য অর্জনে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেব।’ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে অংশ নেওয়া বহু প্রতিষ্ঠান আগেও এই এক্সপোতে অংশ নিয়েছিল। তবে এবার তারা চীনের হাত ধরে আরও বেশি নতুন উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছে। বস্টন-উদ্ভূত অর্গান এইজ ম্যানেজমেন্ট ব্র্যান্ড লাইফের জন্য এটি প্রথমবারের অংশগ্রহণ হলেও, প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই মেলার সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদের সব প্রদর্শিত পণ্যকে বাজারজাত করতে পেরেছে, যার মাধ্যমে তারা চীনা বাজারে প্রবেশ করেছে। সিআইআইই-এর ইতিবাচক প্রভাব কাজে লাগিয়ে আমেরিকান চিকিৎসা সরঞ্জাম কোম্পানি মেডট্রোনিক তাদের প্রথম ডিজিটাল হেলথকেয়ার ইনোভেশন হাব স্থাপন করেছে বেইজিংয়ে। মেডট্রোনিক গ্রেটার চায়নার প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স গু বলেন, ‘চীন এখন বৈশ্বিক চিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ভাবনের একটি উৎসে পরিণত হচ্ছে। আমরা চীনে আরও বিনিয়োগ করব—শুধু বিপণনে নয়, বরং সাপ্লাই চেইন ও উদ্ভাবনেও।’ এবারের মেলায় চীনা বাজারে ভবিষ্যৎ দেখেছেন এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। নরওয়ে এসেছিল তাদের সামুদ্রিক খাদ্য শিল্প নিয়ে। পণ্য ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত, থেকে শুরু করে রুয়ান্ডাও। আফ্রিকার দেশটি নিয়ে এসেছিল তাদের ১৮টি প্রতিষ্ঠান চা, কফি, মধু ও মরিচসহ নানা পণ্য। রুয়ান্ডা ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মিশেল উমুরুঙ্গি জানালেন, ‘সিআইআইই এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে।’ হাই টেক প্রযুক্তি ও পণ্যের সম্ভার ছিল এবারের মেলার মূল আকর্ষণ। চীনের তৈরি এআই যুক্ত বিশেষ ধরনের রোলার স্কেট দেখার জন্য ভিড় লেগেই ছিল। এ জুতা পরে চলতে ভারসাম্য নিয়ে খুব বেশি চর্চার প্রয়োজন হয় না এবং অনেক ধরনের মাটিতে এটি পরে অনায়াসে স্কেটিং করা যায়। আরও দেখা গেছে ইভটলসহ আরও কিছু নির্মাতার অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী ড্রোন প্রযুক্তি। আকর্ষণ করেছে বিশেষ স্লিপ কেবিন। ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কের তরঙ্গকে বিশেষভাবে চালিত করে যেই প্রযুক্তি দিতে পারছে ১৫ মিনিটের গভীর ঘুমের অভিজ্ঞতা। ওয়েই ওয়েই নামের এক প্রদর্শক বললেন, ‘যন্ত্রটি কাজ করে চার্জযুক্ত কণার তরঙ্গ ব্যবহার করে। গভীর নিদ্রার সময় আমাদের মস্তিষ্কের ধীর তরঙ্গের সঙ্গে এটি এক ধরনের ভারসাম্য তৈরি করে। এতে মানুষ দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারে এবং গভীর ঘুমের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হয়।’ এবারের চীন আন্তর্জাতিক আমদানি এক্সপোয় অংশ নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুই হাজারেরও বেশি খাদ্য ও কৃষিপণ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এসেছে ফল, মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য। অনেক প্রদর্শকই স্বাদ গ্রহণের স্টল স্থাপন করেছেন, যেখানে অতিথিরা সরাসরি পণ্যের নমুনা উপভোগ করেছেন। এদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ছিল যারা তাদের নতুন পণ্যের সূচনা করেছেন চীনা বাজারের হাত ধরেই। প্রাকৃতিক ও ভেষজ পণ্যের জন্য পরিচিত ইরানি ব্র্যান্ড বারিজ চীনা বাজারে সাফল্য অর্জন করেছে চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এটি এখন চীনের অন্যতম স্বনামধন্য ইরানি ব্র্যান্ড হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি মেলায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার আলপাকা পুতুলও। সূক্ষ্মভাবে হাতে তৈরি এই খেলনাগুলো মুগ্ধ করেছে চীনা ক্রেতাদের। অর্থাৎ পেরুর কারুশিল্পীদের জন্যও সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে চীনের এই আমদানি মেলা। আগামী বছরের নবম চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোর জন্য ইতোমধ্যেই প্রায় ১০০টি বিদেশি কোম্পানি তাদের প্রদর্শনী স্টল সংরক্ষণ করেছে। ফয়সল/নাহার তথ্য ও ছবি: সিসিটিভি

Rate This Article

How would you rate this article?

ED Desk
ED Desk Staff Reporter

Experience in write about 5 years.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.