নভেম্বর ২২, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: ৮০ বছর আগে, মানব ইতিহাসের এক অন্ধকারতম অধ্যায়ে, চীন শুধু নিজের অস্তিত্বই রক্ষার লড়াই করেনি, বরং বিশ্বের ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধেও রেখেছে অনন্য অবদান। জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৪ বছরের দীর্ঘ প্রতিরোধে চীনের প্রাণহানি, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি আর ত্যাগের গল্প আজও প্রাসঙ্গিক। ইতিহাসবিদরা বলেন—চীন না থাকলে যুদ্ধের গতি–প্রকৃতি পুরোই বদলে যেত।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তাইওয়ানে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে জাপান পার্লামেন্টে তিনি দাবি করেন—চীনের মূল ভূখণ্ড “তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক পদক্ষেপ নিলে” জাপানের সেল্ফ-ডিফেন্স ফোর্স কথিত যৌথ আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। চীনের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি মন্তব্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানান।
তাইওয়ানের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও শিক্ষাবিদরা বলছেন—এ ধরনের মন্তব্য শুধু উত্তেজনা বাড়াবে, বরং তাইওয়ানকে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তাইওয়ানের অধ্যাপক ইউয়ান চুচেং জানালেন, ‘তাকাইচির মন্তব্যের ভিত্তিটার কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাইওয়ানকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার কথা কেন বলা হচ্ছে? যুদ্ধ যে কত ভয়াবহ—তিনি কি তা জানেন না?’
তাইপে ভিত্তিক চায়না টাইমস-এর চেয়ারম্যান ওয়াং ফেং বলেছেন, “চীনের মূল ভূখণ্ডের সামরিক শক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী। তাকাইচির মন্তব্য তাইওয়ানের লাই ছিং তে’কে ক্ষণিকের মানসিক উত্তেজনা ছাড়া আর কিছু দিতে পারবে না। বাস্তবে এমনটা ঘটলে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে।’
এদিকে তাইওয়ানের কুওমিনতাং–এর সাবেক আইনপ্রণেতাও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন—তাকাইচির মন্তব্য এমন এক সংকট ডেকে আনতে পারে, যা সামাল দেওয়ার অবস্থায় নেই তাইওয়ান।
কেএমটির সাবেক আইনপ্রণেতা জোয়ানা লেই জানালেন, ‘তাকাইচির মন্তব্য ঐক্যবদ্ধ তাইওয়ানের ওপর নির্ভর করে হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, এটি তাইওয়ানের গভীরতম অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও ঘনীভূত করেছে। লাই ছিং-তে এবং ডিপিপির বহু স্বাধীনতাপন্থী গোষ্ঠী তাকাইচির বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে, এমনকি উদ্যাপনও করেছে। তাকাইচির অবস্থান এই গোষ্ঠীর ওই ধারণাটিকেই উসকে দেয়, যাতে বলা হয় তাইওয়ান এখনও জাপান-কেন্দ্রিক আঞ্চলিক সম্প্রদায়ের অংশ।’
তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা বাড়ার পাশাপাশি স্মরণ করা জরুরি—এশিয়ায় যুদ্ধের ইতিহাস কীভাবে তৈরি হয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন কী বিশাল অবদান রেখেছে।
এ বছর চীন-জাপান যুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ের ৮০তম বছর। চীনের বিরুদ্ধে জাপানি আগ্রাসনের প্রতিরোধ ছিল দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী। প্রায় সাড়ে তিন কোটি চীনা নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছিলেন, এবং চীন বিপুল অর্থনৈতিক সম্পদও হারিয়েছিল।
চীনের প্রতিরোধের কারণে জাপান তার বাহিনীকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠাতে পারেনি, প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধেও তারা ব্যাপক সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ে—যা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অভিযানে সহায়তা করে।
এই লড়াইয়ে চীনের পাশে দাঁড়িয়েছিল আন্তর্জাতিক বন্ধুরাও। মার্কিন ‘ফ্লাইং টাইগার্স’ জাপানি বিমান ও যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে জার্মান ব্যবসায়ী জন রেইব নানচিং হত্যাকাণ্ডের সময় আড়াই লাখের বেশি মানুষকে রক্ষা করে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
চীনের এই সংগ্রাম শুধু একটি যুদ্ধের গল্প নয়—এটি ন্যায়, সাহস ও ত্যাগের ইতিহাস। তাইওয়ান প্রণালীতে যেকোনো সামরিক উসকানি তাইওয়ানসহ পুরো অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক বলে সতর্ক করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে—যুদ্ধের ক্ষত মুছতে বহু প্রজন্ম লেগে যায়, কিন্তু উসকানি দিতে লাগে মাত্র কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত।
ফয়সল/শুভ
তথ্য ও ছবি: সিসিটিভি
জাপানি প্রধানমন্ত্রীর কথায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তাইওয়ানের বিশেষজ্ঞমহলে
Connect With Us:
Advertisement
Our Editorial Standards
We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.
Fact-Checked
This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.
Expert Review
Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.
Regularly Updated
We regularly update our content to ensure it remains current.
Unbiased Coverage
We strive to present balanced information.