বিএসএমএমইউ-এটুআই স্পেশালাইজড টেলি হেলথ সেন্টার চালু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এর উদ্যোগে এবং এটুআই, আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সারাদেশের অসুস্থ মানুষকে ভিডিও ও অডিও কলের মাধ্যমে যেকোন চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ প্রদানের জন্য চালু হল বিএসএমএমইউ-এটুআই স্পেশালাইজড টেলি হেলথ সেন্টার। এই সেন্টারটি আজ ১৩ মে ২০২০ বিএসএমএমইউ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এর এটুআই কর্তৃক যৌথভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আলী নুর এবং এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ। এটুআই-এর চীফ ই-গভর্ন্যান্স স্ট্র্যাটেজিস্ট ও প্রধান সমন্বয়কারী জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ এর সঞ্চালনায় অনলাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা.কনক কান্তি বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ স্পেশালাইজড টেলি-হেলথ সেন্টার এর প্রেক্ষাপট ও সেবা পদ্ধতি বিষয়ক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন।

কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সারাদেশের অসুস্থ মানুষকে যেকোন চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ প্রদানে গত ৫ এপ্রিল চালু করা হয়েছে ‘বিশেষজ্ঞ হেলথলাইন’। ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭ নম্বরে কল করে বিনামূল্যে টেলিফোনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ বা সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। এ প্রেক্ষিতে আজ চালু করা হলো ‘স্পেশালাইজড টেলি-হেলথ সেন্টার’। ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭ নম্বরে ভিডিও কল এবং টেলিফোনের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন। এই টেলি হেলথলাইনের মাধ্যমে তিনটি ধাপে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত সপ্তাহে শনি-বৃহস্পতিবার সকাল ৯.০০ থেকে দুপুর ২.০০ পর্যন্ত রোগীদের সেবা প্রদান করবেন। প্রথম ধাপে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডাক্তারগণ কলটি রিসিভ করে রোগীর সমস্যাসমূহ লিপিবদ্ধ করবেন। সাধারণ সমস্যা হলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন। দ্বিতীয় ধাপে প্রথম ধাপ থেকে ফরওয়ার্ডকৃত কলগুলো কনসালটেন্ট এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরগণ সেবা প্রদান করবেন এবং তৃতীয় ধাপে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর/প্রফেসরগণ থাকবেন। তারা প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপ থেকে রেফার করা রোগীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর ভিত্তিতে ১৫টি বিশেষ সেবা প্রদান করবেন। এই কল সেন্টার এবং টেলি হেলথ সেন্টারের মাধ্যমে ৫৪৫ জন ডাক্তার ইতোমধ্যেই ১০৩৯২ জনকে সেবা প্রদান করেছেন। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য bsmmu.corona.gov.bd থেকেও পাওয়া যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার পরামর্শের প্রেক্ষিতে এই চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি অবকাঠামো তৈরি হওয়ার কারণে এই কোভিড- ১৯ এর সংকটকালীন সময়ে আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারছি। এজন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, কোভিড- ১৯ এর ফলে সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে ডিজিটাল হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, সৃষ্ট এই পরিস্থিতিরির কারণে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কাজ করা সকল সরকারি এবং প্রাইভেট সংস্থাগুলোকে সমন্বয় করা সম্ভব হয়েছে। যেটা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতকে আরো সুদৃঢ় করে তুলবে বলে আমি আশা করি। তিনি সকলকে এই টেলিমেডিসিন সেন্টারের মাধ্যমে সেবা নেওয়ার আহবান জানান।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, করোনা যুদ্ধে আমাদের সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে এবং দূর থেকে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থায় আমরা যত বেশি সুযোগ করে দিতে পারবো তত বেশি জয়ের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। তিনি আরো বলেন, বিপদ কিন্তু আমাদের সবসময় নতুন কিছু করার দিকে নিয়ে যায়, টেলিমেডিসিন আগেও ছিল এখন আরো আধুনিক হয়েছে। আমি আশা করি এটি স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ অবদান রাখবে। বিশেষ করে বিএসএমএমইউতে সম্মানিত চিকিৎসকবৃন্দ আছেন, যারা করোনা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন তাদের পরামৰ্শ পাওয়ার একটি ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনলাইনে মেডিসিন সরবরাহকারীদের যদি এখানে যুক্ত করা যায় এটি আরো বেশি কার্যকর হবে এবং সকল সেবা এক জায়গা থেকে পাওয়া সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আলী নুর বলেন, বিএসএমএমইউ এই টেলি হেলথ সেন্টার একটি চমৎকার উদ্যোগ। এর মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং অবহেলিত গোষ্ঠী খুব সহজেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিকট থেকে সেবা নিতে পারবেন। তিনি সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেন এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযু্ক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে এই টেলি হেলথ সেন্টার সম্পর্কে জানতে এবং সেবা নিতে পারেন, সেজন্য প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালগুলোতে এটুআই, আইসিটি বিভাগের কারিগরি সহযোগিতায় পর্যায়ক্রমে এই টেলি হেলথসেন্টারটি সম্প্রসারণ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। একইসাথে ৩৩৩ মাধ্যমে এই পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ লোককে সেবা প্রদান করা হয়েছে সেটা উল্লেখ করেন। এটুআই দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই-বোনদের জন্য প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারের মাধ্যমে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে সেটাও তুলে ধরেন।

এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আজ নতুন এক অধ্যায় উন্মোচিত হলো। এই দৃষ্টান্ত অন্যান্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যারা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেন সেখানে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই সকল রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এটুআই, আইসিটি বিভাগ যৌথভাবে টেলিমেডিসিন সেবা সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সেই লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি এসময় উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ টেলি হেলথ সার্ভিস প্রদানকারী সকল প্রতি্ঠানকে একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য এটুআই পোর্টাল প্রস্তুত করছে।

অনলাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) জনাব ডা. আমিনুল ইসলাম, বিএসএমএমইউ আইসিটি সেল এর ইনচার্জ ও ফার্মাকোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান, সিনেসিস আইটি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সোহরাব আহমেদ চৌধুরী, পালস্ হেলথ কেয়ার সার্ভিস এর ফাউন্ডার রুবাবা দৌলা, ডাক্তারভাই হেলথকেয়ার ইনফরমেশন সিস্টেম লিমিটেড এর কো-ফাউন্ডার জনাব রায়হান শামসী, ওলওয়েল বিডি লি. এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জনাব এম এম আফতাব হোসেন’সহ বিএসএমএমইউ এর বিভিন্ন অনুষদের ডিনগণ, চেয়ারম্যানগণ, আইসিটি বিভাগ ও এটুআই এর কর্মকর্তাগণ এবং গণমাধ্যম কর্মীগণ।

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24
Edu Daily 24

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.