শেখ রাসেল কবিতা ও ছড়া ২০২৩

শেখ রাসেল কবিতা ও ছড়া ২০২৩ : ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিন বা শেখ রাসেল দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি উপলক্ষ্যে শেখ রাসেলকে নিয়ে কবিতা, ছড়া, রচনা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে সরকারি একাধিক মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান। 

 

শেখ রাসেল কবিতা ২০২৩ – Sheikh russel poetry 2023

এখানে শেখ রাসেলকে নিয়ে কবিতা ও ছড়ার নমুনা দেয়া হলো :

শেখ রাসেল কবিতা আবৃত্তি – মোঃ নাজমুল হাসান

রাসেল তুমি এতই চতুর বলা বাহুল্য,

              অসাধারণ তুমি

হয় না কারোর সাথে তুল্য।

            তোমারি গুণে মুগ্ধ সবাই অনন্ত এই বিশ্বাচরে,

তোমারি কথা কেউ কেমনি করে ভুলিতে পারে।

            কত স্বপ্ন ছিলো তোমার, হবে আর্মি অফিসার,

নেতৃত্বসুলভ ছিলে তুমি, ছিলো প্রতীক মানবতার।

           প্রিন্স স্যুট পড়ে চেয়েছিলে বাবা শেখ মুজিব হতে,

বন্ধুদের পুরুষ্কার দিয়ে প্যারেডের মাধ্যমে

            অসাধারণ নেতৃত্ব দিতে।

কারাগারে বাবাকে দেখতে গিয়ে

            “বাবা চলো” বলে দেখিয়েছ এক অদম্য সাহসিকতা,

পালিত কবুতরের মাংস না খেয়ে দেখিয়েছ প্রাণী মমতা।

             অসম্ভব মেধাবী ছিলে তুমি, শিক্ষিকার মুখে বলা,

তাই তো হাসু আপার হাত ধরে,

            একদিনেই শিখেছিলে হাটাচলা।

ভ্রমণ করেছিলে তুমি জাপান ও রাশিয়া,

সবার আদর স্নেহে বেড়ে ওঠেছিলে হাসিয়া হাসিয়া।

১৫ আগষ্ট ১৯৭৫

             সেই হাসি কেড়ে নেমে এলো এক করুন অন্ধকার,

সপরিবারে প্রাণ নিয়ে ঘাতক দল

             সব কিছু করে দিলো ছারখার।

চিৎকার করেছিলে তুমি

             মায়ের কাছে যাব, নিয়ে যাও,

মায়ের মরদেহ দেখে তুমি অবশেষে বললে

             আমাকে হাসুর কাছে পাঠিয়ে দাও।

এমনই নৃশংস ঘটনা ঘটে না যেন আর,

সরকারের কাছে এই মিনতি বারেবার।

 

 

শেখ রাসেলকে নিয়ে কবিতা ও ছড়া

কবি-ছড়াকার কাসেম আলী রানার সম্পাদনায় সংকলন ‘ছড়া কবিতায় শেখ রাসেল’।

 

বুবুর চোখে জল
রাশেদ রউফ

একটি দোয়েল গাছের শাখায় বিষণ্নতা দেখে
পায়রাগুলো পাখসাটে না ধানমণ্ডির লেকে।
কুকুরটাও ইচ্ছে মতো ভাঙে না আড়মোড়া
স্বপ্নেও কেউ ছোটায় না আর পঙ্খিরাজের ঘোড়া।

পায়রাগুলো নোটন নোটন জোটন বাঁধতো মাঠে
হাঁসের ছানা নায়ের মতো খেলতো পুকুর ঘাটে।
ওরা এখন কেউ খেলে না, নাচে না ধেই ধেই
কারণ ওদের খেলার সঙ্গী রাসেল সোনা নেই।

যার জন্যে এই অরণ্যে উঠতো কলরব
যে পেতো মা বাবা ভাইয়ের আদর সোহাগ সব
দস্যুরা তার লুট করেছে জীবন মায়া সুখ
গুলির পরে গুলি ছুঁড়ে ঝাঁঝরা করে বুক।

রাসেল রাসেল কোথায় তুমি, কোথায় করো বাস
তোমার দিকে তাকিয়ে সবাই মাসের পরে মাস।
তোমার জন্য আকাশ কাঁদে, বাতাস কাঁদে হুহু
কাঁদে পাখি গাছগাছালি নদী মুহুর্মুহু।

নেই উচ্ছ্বাস, শ্বাস -প্রশ্বাস, নেই তো কোলাহল
তোমার জন্য কাঁদছে স্বদেশ, বুবুর চোখে জল।

 

 

ধানমণ্ডির বুকে
রাশেদ রউফ

মুয়াজ্জিনের আজান যখন সুবেহ সাদিক খোঁজে
একচক্ষু দানব তখন কাপড়ে মুখ গোঁজে।
নির্লোম বুক, দমকা বুলেট, শাণিত খঞ্জর
কাঁপতে থাকে ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বর

প্রিয় বাড়ি, যার রয়েছে অনেক ইতিহাস,
সেই বাড়িতে উঠলো ভেসে রক্তভেজা লাশ।
লাশের ওপর দানব হাসে বীভৎস ঘর্ঘর –
রক্তে রক্তে দেশ হয়ে যায় কারবালা প্রান্তর।

মহরমের মাতম শুনি ধানমণ্ডির বুকে
লেকের পানি নিথর চোখে কান্না ঝরায় দুখে
শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ে, উধাও শান্তি-সুখ
বুলেটবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু, বাংলা মায়ের মুখ –

তার সঙ্গে একটি শিশুর রক্তস্রোতে ভেসে
নিসর্গ নেয় লাল রঙা বেশ সারা বাংলাদেশে।
আকাশে নেই সূর্য, তবু রুদ্র খরতাপ
কেমন ছিল সেই শিশুটি? ‘নিষ্পাপ! নিষ্পাপ!’

রাসেল নামের সেই শিশুটির জন্য আমার মন-
বিলাপ করে হাওয়ায় হাওয়ায়, দুঃখ সারাক্ষণ।

 

 

বঙ্গবন্ধুর চোখের মণি
রাশেদ রউফ

আগুন চাপা দুঃখ বুকে এগিয়ে চলি আমি
একটু দাঁড়াই, একটু হাঁটি, আবার একটু থামি।

আমি শুনি কান্নার সুর হাওয়ার মতো হু হু
তার সঙ্গে আকাশ নদী কাঁদছে মুহুর্মুহু।

কার জন্যে কাঁপছে পাহাড়, কাঁদছে বাড়িঘর
ধানমণ্ডির লেক হয়েছে কারবালার প্রান্তর!

একটি ছেলে ছিল, এখন সেই ছেলেটি নেই
তার জন্যে কান্না এমন, হারিয়ে ফেলি খেই।

সেই ছেলেটি প্রিয় রাসেল – আদরমাখা মুখ
বঙ্গবন্ধুর চোখের মণি-বাংলাদেশের বুক।

 

 

রাসেল
বিপুল বড়ুয়া

একজন রাসেলের
অনন্য গল্প
কোত্থায় বড়োসড়ো
সে জীবন স্বল্প।

বাবা-মা-ভাইবোন
সব্বার চোখ
হেসে খেলে ছোট বাবু
হোক বড় হোক।

বড় হওয়া হলো কি
বাজ আসে নেমে
মার কাছে নিয়ে যেতে
দে’জীবন থেমে।

বুলেটে ঝাঁঝরা
রাসেলের বুক
বাঙালির জন্য
চিরকাল দুখ।

 

 

রাসেল বলছি
দীপক বড়ুয়া

রাসেল আমার নাম
ভাইবোনদের সবার ছোট
তবু খ্যাতি দাম!

ধানমণ্ডির বত্রিশে
ছোট্ট প্রিয় ঘর,
হাসি খুশি ভালোবাসা
মায়ারই সাগর!

ফুল পাখি নদ বাঙালি মা’র
চোখে নোনা জল,
কাঁদছে সাগর পুকুর, দীঘির
পদ্ম শতদল!

সবাই দামী, স্মৃতিলয়ে
তাদের লেখায় আমি,
ভালোবাসায় আছি তবু
জানেন অন্তর্যামী!

 

 

এমন রাসেল
আজিজ রাহমান

রাসেল রাসেল রাসেল কই
মাঠে-ঘাটে কী হইচই!
সঙ্গী ছিল সাইকেল তার
পাখির সাথে একাকার।

বাবার হাতে হাত ধরা
স্বপ্নে স্বপ্নে মন গড়া
আনন্দে তার কাটতো ঠিক
মনটা ছিল মানবিক।

এমন গর্বের রাসেল এই
দেশটির প্রাণ বুঝল যেই
ঘাতক সেনা হুংকারে
গুলির ঝাঁকে প্রাণ কাড়ে।

দেশ কাঁপানো হয়নি আর
চুরমার হয় স্বপ্ন তার।
স্বপ্ন নায়ক রাসেল তাই
এমন রাসেল আরও চাই।

 

 

রাসেল সোনার মন
আজিজ রাহমান

আগস্ট মাসের পনের তারিখ
যেন বিষাদের দিন
রাসেল সোনার প্রাণ কেড়ে নিয়ে
ঘাতক বাজায় বীণ।
ছোট্ট রাসেল বাঁচতে চাইল
বাঁচতে দিল না তারা
মার কাছে তাকে নিয়ে যাবে বলে
ঝরায় রক্তধারা।

টেবিল চেয়ার সাইকেল আর
পায়রাও যার সাথী
শোকের মাতমে কেঁপে ওঠে সব
কাঁপলো বাঙালি জাতি।
রাগে ঘিন ঘিন বুকে চিন চিন
একি হলো একি হলো
আকাশ বাতাস ফুল পাখি পাতা
কান্নায় টলোমলো।

জাতির পিতার আদরের ধন
রাসেল সোনার মন
আজও আমাদের মনজুড়ে থাকে
যেন কী আপনজন!

 

 

অমর রাসেল
আবুল কালাম বেলাল

শান্ত কোমল চাঁদমুখ এক ছেলে
বাড়ির মুক্ত ছাদে উঠে ডানা মেলে-
পায়রা ওড়াতো, লাটিম ঘুরাতো দিনে
অলিগলি যত সাইকেলে নিতো চিনে
রাত এলে পর জোসনা দেখার ধুম
দুচোখে রঙিন স্বপ্নজড়ানো ঘুম
বুকে ছিলো আলো মুখে ছিলো সোনা হাসি
চুমকুড়িমাখা সেই মুখ ভালোবাসি।
ভালোবাসি তার প্রীতিডোরে বাঁধা মন
মায়াবী চাহনি, আদুরে উচ্চারণ।

ছন্দ ছড়ার বই ছিলো যত তার-
প্রাণে মেখে দিতো আনন্দ অনিবার।
ছিলো না হিংসা, জানতো না কূটচাল
স্বার্থ দম্ভে হয়নিও বেসামাল।
এমন সোনার ছেলে প্রিয় কার নয়?
কালো মনই দেয় নারকীয় পরিচয়।
বাংলার সব শিশু তাকে ভালোবাসে
রক্ত পিপাসু দানব কেবল হাসে।
পঁচাত্তরের ভয়ানক এক রাতে
চাঁদ ডুবে যায়, উল্লাসে দানো মাতে।

ডুবলেও চাঁদ ডোবেনি চাঁদনি তার
আমাদের বুকে ফিরে আসে বার বার।
হাসুর কবিতা, ‘জাতির পিতার পিতা’
অমর রাসেল- এই বাংলার মিতা।

 

 

সবার প্রিয়
অমিত বড়ুয়া

সবার প্রিয় রাসেল সোনা
তাকে নিয়েই স্বপ্ন বোনা।
স্বপ্নে আমি কী কী চাই
সম্প্রীতির এক বাংলা চাই।

অর্থে যশে ভরলে দেশ
আমার ভালো লাগবে বেশ।
চাই না কোনো দলাদলি
করবো শুধুই গলাগলি।

 

শিশু থাকুক হেসে খেলে
এগিয়ে যাক আলোক জ্বেলে।
যত আছে ভূখা নাঙ্গা
তাদেরও হোক জীবন রাঙা।

 

 

অন্ন বস্ত্র বাসস্থান
সবারই হোক সংস্থান।
এমনই এক বাংলা চাই
অন্যকিছু চাওয়ার নাই।

 

 

বাঁচার অধিকার
ইসমাইল জসীম

দূর্বা ঘাসে শিশির কণা
সূর্যটা দেয় হানা,
রাসেল সোনা ছুটছে পিছু
ধরবে ফড়িং ছানা।

পূর্ণিমা রাত আলোর ঝলক
চাঁদের কণা হাসে,
রঙ বেরঙের স্বপ্নে রাসেল
আনন্দেতে ভাসে।

হঠাৎ করে আকাশ জুড়ে
মেঘের শামিয়ানা,
মর্টার এবং মেশিনগানে
বর্গীরা দেয় হানা।

মায়ের বুকে আঁচল পেতে
রাসেল ঘুমায় সুখে,
মেশিনগানের একটি বুলেট
বিঁধলো এসে বুকে।

লুটিয়ে পড়ে মানবতা
নিথর দেহ তার,
শেখ রাসলের বেঁচে থাকার
নেই কি অধিকার?

 

 

রাসেল সোনা
রাশিদা তিথি

মায়ের বুকে ঘুমিয়ে ছিল রাসেল সোনা
বাবার চোখে আদর ছিল সোনায় বোনা;

একদিন রাতে দৈত্য এলো শব্দ করে
রক্ত ধারা গড়িয়ে দিলো সিঁড়ির পরে!

উল্লাস করে পাষাণ খুনিরা রক্তময়
এমন পিশাচ নির্দয় প্রাণ কি কখনো হয়?

রাসেল সোনা বাঁচাও বলে আর্তি করে
ডুকরে ওঠে গাছের পাতা করুণ স্বরে!

পাখিটাকে মারল তারা ভাঙলো ডানা
কান্না এতো থামবে কবে নেই তো জানা!

মন বলে যে দেশের সকল শিশুর মুখে
সেই সোনা মুখ জাগছে যেন সুখে-দুঃখে।

 

 

রাসেল আমার সোনা পাখি
কাসেম আলী রানা

দোয়েল কোয়েল ময়না পাখি
সবুজ সবুজ টিয়া,
রাসেল সোনা চাঁদের কণা
প্রজাপতির বিয়া।

প্রজাপতি; প্রজাপতি
কোথায় তুমি কই,
রাসেল সোনা স্বর্গে হাসে
চেয়ে দেখো ওই।

রাসেল আমার সোনা পাখি
আমার প্রিয় স্বজন,
তার জন্য খোদার কাছে
চোখের জলে ভজন।

 

 

মায়ের পাশে ঘুমায় যাদু
কাসেম আলী রানা

দশ বছরের ছোট্ট শিশু
কেমনে করলি খুন,
জোঁকের বাচ্চা জোঁক রে তোরা
তোদের মুখে নুন।

বুকে বুলেট নিয়ে বাছা
ঘুমায় কবরে,
রক্তের স্রোতে মাটি ডুবে
শুনি খবরে!

মায়ের পাশে ঘুমায় যাদু
কষ্ট নিয়ে বুকে,
মা মা বলে ডাকে রাসেল
আদর মাখা মুখে।

 

 

রাসেল সোনা
কাসেম আলী রানা

রাসেল সোনা শুনতে কি পাও
বলি কানে কানে,
কয়টা বুলেট লেগেছিল
খোদা নিশ্চয় জানে।

খোদার কাছে আর্জি করি
খোদা তুমি মহান,
বঙ্গবন্ধুর রক্তে- বংশে
দিও স্বর্গ সহান।

শিশু যারা হত্যা করলো
যে সব নিষ্ঠুর ঘাতক,
তাদের আজ কেয়ামত হোক
বলে পাগল কথক।

রাসেল যদি আবার আসতো
কাসেম আলী রানা

আগস্ট আসে আগস্ট যে যায়
আমার বুকে ক্ষত,
আমিতো লৌহ মানব নই
পুড়ি মোমের মতো।

শোকে শোকে মাতম ওঠে
রাসেল সোনা কই,
পনেরই আগস্ট বুকের ভেতর
কান্নার জল হৈ চৈ!

রাসেল যদি আবার আসতো
বুকে রেখে বুক,
বলতাম- ভাই কত ভালোবাসি
তুমিই কষ্টের সুখ।

 

 

শেখ রাসেল দিবস বা শেখ রাসেলের জন্মদিন কবে?

শেখ রাসেল দিবস হলো ১৮ অক্টোবর। জন্ম তারিখ ১৮ অক্টোবর ১৯৬৪।

 

 

আরো পড়ুন :
শেখ রাসেল রচনা (৬০০ শব্দ)