বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে প্রিলির প্রস্তুতি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে প্রিলির প্রস্তুতি

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদের আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এবার প্রস্তুতির পালা। সাধারণত আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার তিন-চার মাসের মধ্যেই প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা (প্রিলিমিনারি) হয়। এই সময়ের মধ্যে কিভাবে কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া যায় তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক মাসুদ রহমান ও সাবেকুন নাহার শিরিনের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

পরীক্ষা পদ্ধতি : মূলত তিনটি ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীরা পরবর্তী সময়ে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তারপর সর্বশেষ ধাপ হলো ২৫ নম্বরের ভাইভা।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে তাহলো—গণিত ও মানসিক দক্ষতা-৩০, ইংরেজি-২৫, বাংলা-২০, সাধারণ জ্ঞান-১৫, কম্পিউটার-১০, সর্বমোট ১০০ নম্বর।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্ন থাকবে ১০০টি। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর করে বরাদ্দ। নেগেটিভ মার্কিং থাকলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর করে কেটে নেওয়া হবে। তবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে নেগেটিভ মার্কিংয়ের কথা উল্লেখ না থাকলে ভুল উত্তরে নম্বর কাটা হবে না।

কার্যকর ১০ পরামর্শ :
১। প্রস্তুতির শুরুতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বিগত সালের সব প্রশ্ন (সমাধানসহ) সংবলিত বই বাজার থেকে সংগ্রহ করুন। এই বইটিকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি পর্ব শুরু করা যেতে পারে। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সচরাচর আসে এমন প্রশ্নগুলোর ধরন কী, কোন কোন টপিকস থেকে প্রশ্ন থাকার প্রবণতা বেশি, সেগুলো খুঁজে বের করুন। আর কোন টপিকস থেকে সাধারণত প্রশ্ন থাকে না, সেগুলোও নোট করুন। এ কাজটি যত ভালোভাবে করতে পারবেন, আপনার প্রস্তুতি পরিকল্পনা সাজানো তত সহজ হবে।

২। পরীক্ষায় কী ‘পড়বেন’, তার চেয়ে বেশি জরুরি হলো ‘কী বাদ দেবেন’। যখন জানা হয়ে যাবে—কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে, কোন কোন টপিকস থেকে বেশি বেশি প্রশ্ন আসে, তখন সেসব টপিকস নিয়ে নিজেই একটা সাজেশন বা গাইডলাইন তৈরি করতে পারবেন। এই গাইডলাইন ধরেই প্রস্তুতি শুরু করে দিন।

৩। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য তিন মাসের মতো (সম্ভাব্য) সময় পাবেন—এ কথা মাথায় রেখেই পাঠ পরিকল্পনা ঠিক করবেন। পুরো প্রস্তুতি পরিকল্পনার পাঠগুলো তিন মাসের জন্য তিন ভাগে ভাগ করে নিন। এ সময়ের মধ্যে যেন পর্যায়ক্রমে সব বিষয়ের প্রস্তুতি হয়ে যায়। মাসিক রুটিনের পাশাপাশি দৈনন্দিন রুটিনও ঠিক করে ফেলুন। সে অনুযায়ী প্রতিদিনই প্রস্তুতি নিন। দেখবেন প্রস্তুতি যেমন ভালো হবে, আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

৪। অনেক সময় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি ইংরেজিতে দক্ষ কিন্তু গণিতে দুর্বল। আবার কেউ কেউ গণিতে দক্ষ, তবে ইংরেজিতে কাঁচা। শুধু ব্যাংকের চাকরিই নয়, অধিকাংশ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করার মূলমন্ত্র ‘ইংরেজি’ ও ‘গণিত’ উভয় বিষয়েই দক্ষ হওয়া। তাই প্রথমে কিছুদিন গত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ ও সমাধান করার পর ইংরেজি ও গণিতে বাড়তি সময় দিন। বিষয় দুটিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিন। এ দুই বিষয়ে যত দক্ষ হবেন, ‘চাকরি ততই হাতের নাগালে’ মনে করবেন।

৫। বিগত প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিজের ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ থাকলেই ইংরেজিতে ভালো করাটা সহজ হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন ২০-২৫টি করে নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ শিখুন। প্রতিদিনের রুটিনের একটা সময় এর জন্য রাখুন। ভোকাবুলারি যাতে ভুলে না যান, সে জন্য প্রতিদিনই গত দিনের শেখা শব্দগুলো আগে রিভিশন দিয়ে তারপর নতুন শব্দ পড়বেন। এভাবে নিয়মিত কয়েক মাস পড়তে পারলে ভোকাবুলারি নিয়ে আর সমস্যায় পড়তে হবে না।

পরীক্ষায় কী ‘পড়বেন’, তার চেয়ে বেশি জরুরি হলো ‘কী বাদ দেবেন’। যখন জানা হয়ে যাবে—কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে, কোন কোন টপিকস থেকে বেশি বেশি প্রশ্ন আসে, তখন সেসব টপিকস নিয়ে নিজেই একটা সাজেশন বা গাইডলাইন তৈরি করতে পারবেন

৬। ইউটিউব কিংবা ওয়েবসাইট থেকে প্রতিদিন বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর ইংরেজি খবর শুনতে বা পড়তে পারেন। জাতীয় পত্রিকাগুলোও নিয়মিত পড়বেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক ও সম্পাদকীয় পাতা। প্রতিদিন ইংরেজি দৈনিকের এডিটোরিয়াল বাংলায় এবং বাংলা দৈনিকের সম্পাদকীয় ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। এই কাজগুলো করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি ফল দেবে। সাধারণ জ্ঞানে তো দক্ষ হবেনই, পাশাপাশি ইংরেজিতেও (বিশেষ করে অনুবাদ ও লেখায়) দারুণ দক্ষ হয়ে উঠবেন।

৭। গণিতে দুর্বলতা থাকলে এ নিয়ে ভয় না পেয়ে সহজ অধ্যায়গুলো দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করুন। সম্ভব হলে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বই থেকে অনুশীলন করে বেসিক ঝালাই করে নিতে পারেন। ধীরে ধীরে কঠিন অধ্যায়গুলোতে যান। ব্যাংকের পরীক্ষায় ‘গণিত’ ইংরেজি সংস্করণে আসে, তাই বেসিক মোটামুটি শক্ত হলে তখনই ইংরেজিতে ‘গণিত’ অনুশীলন করবেন, এর আগে না। গণিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করুন, মুখস্থ করতে গেলে পরে বিপদে পড়বেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য অল্প সময়ে অনেক অঙ্কের সমাধান করতে হয়, এ জন্য শর্টকাট টেকনিক শেখা যেতে পারে। এভাবে কয়েক মাস নিয়মিত অনুশীলন করলে গণিতভীতি কেটে যাবে।

৮। কম্পিউটার নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না হলেও এ বিষয়টিকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। গণিত ও ইংরেজির কোনো বিষয়ে একটু দুর্বলতা থাকলে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি দিয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন। তাই এ বিষয়ের প্রস্তুতি সময়মতো ঝালিয়ে নিন। বিগত সালের প্রশ্ন, এসএসসি ও এইচএসসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বই এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন। বাজারের প্রচলিত একটি গাইড বই সঙ্গে রাখতে পারেন।

৯। বাংলা, সাধারণ জ্ঞান, মানসিক দক্ষতা প্রভৃতি কোনো বিষয়েই অবহেলা করার সুযোগ নেই। সে জন্য সব বিষয়েরই প্রস্তুতি নিতে হবে জোরালোভাবে। বাংলার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ব্যাকরণ অংশে। ব্যাকরণ অংশে ভালো প্রস্তুতির জন্য মুনীর চৌধুরী রচিত নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটি ভালো করে পড়তে হবে। এ ছাড়া গাইড বই দেখা যেতে পারে।

বাংলা সাহিত্যের প্রস্তুতির জন্য খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ অংশ থেকে প্রশ্ন খুব কম আসে। বাংলা সাহিত্য অংশে গুরুত্বপূর্ণ ১০-১২ জন সাহিত্যিক সম্পর্কে ধারণা রাখলে আর চাকরির পরীক্ষায় আসা আগের বছরগুলোর প্রশ্ন সমাধান করলে সহজেই প্রিলিমিনারি ধাপ পেরোতে পারবেন।

১০। এরই মধ্যে সময়-সুুযোগ হলে অন্যান্য ব্যাংকের পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারেন। অথবা বাসায় বসে নিজে নিজেই মডেল টেস্ট দিন। প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকলে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেবেন না, যতটুকুই প্রস্তুতি নিয়েছেন আর যতটুকু পড়ার সুযোগ আছে, পুরো সুযোগই কাজে লাগানোর চিন্তা করুন।

সূত্র : কালের কণ্ঠ । চাকরি আছে । ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24

Edu Daily 24

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.