বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি : শূন্য থেকে শুরু

Rate this post

বিসিএসের নতুন প্রার্থীদের অনেকেই প্রশ্ন করেন, ‘কিভাবে প্রস্তুতি নেব? কী কী বই পড়ব? প্রিলির আগে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির সময় পাব তো?’ একজন প্রার্থী শূন্য থেকে কিভাবে শুরু করবেন, প্রস্তুতি-কৌশল কেমন হবে—জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে কর্মরত রবিউল আলম লুইপা

সিলেবাস দেখে প্ল্যান : প্রস্তুতির শুরুতেই প্রথম কাজ হলো গোটা সিলেবাস ভালো করে দেখা। সিলেবাসে (পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায়) ১০টি বিষয়ের কোনগুলোর জন্য কী কী টপিক পড়তে হবে, তা দেওয়া আছে। প্রিলিমিনারির পাসের জন্য কী কী পড়তে হবে, সেগুলোর পাশাপাশি কী কী পড়ার দরকার নেই—সেগুলোও জানতে হবে। জীবনেও পরীক্ষায় আসবে না এমন টপিক একবার পড়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিক বারবার পড়া অনেক ভালো। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন। এ সময়টায় পাঠ-পরিকল্পনা কেমন হবে—সিলেবাস অনুযায়ী সাজান।

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্নব্যাংক : ১০ম থেকে ৪০তম বিসিএস প্রিলি পর্যন্ত প্রশ্নগুলো দেখে প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিন। ৩৫তম বিসিএস থেকে প্রশ্ন রিপিট হওয়ার প্রবণতা কমে গেলেও আগের প্রশ্নগুলো আপনার জন্য বেঞ্চ মার্কিংয়ের কাজ করবে। অ্যাশিউর্যান্স, প্রফেসরসসহ বাজারের বেশ কিছু প্রকাশনীর বিসিএস প্রশ্নব্যাংক বা জব সলিউশন (বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন) বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

বুকলিস্ট : বিসিএস প্রস্তুতির শুরুতেই নতুন প্রার্থীরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শখানেক বইয়ের তালিকাসংবলিত বুকলিস্ট শুনেই ভয় পেয়ে পিছিয়ে যান। অথচ অল্প কয়েকটি বই পড়েই প্রিলিমিনারি পাস করা সম্ভব।
—বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসন—এ বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়। প্রতিটি বিষয়ের জন্য অন্তত একটি করে বই সংগ্রহ করবেন।
—বাংলা, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য প্রফেসরস/ওরাকল/এমপিথ্রি বা আপনার পছন্দমতো যেকোনো একটি প্রকাশনীর বই সংগ্রহ করতে পারেন।
—ইংরেজির জন্য প্রফেসরসের ‘ইংলিশ ফর কম্পিটিটিভ এক্সাম’ বইটি দেখতে পারেন।
—গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা ও সাধারণ বিজ্ঞানের জন্য ওরাকলের বই দেখতে পারেন। কম্পিউটার ও
তথ্য-প্রযুক্তির জন্য ইজি প্রকাশনীর বই পড়তে পারেন।
—ভূগোল ও নৈতিকতার জন্য বিষয়ভিত্তিক বই সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় না। ডাইজেস্ট থেকে পড়ে নিলেই উত্তর করতে পারবেন।
—বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগ মুহৃর্তে (মূল প্রস্তুতি শেষ হলে) চাকরির প্রস্তুতিসংক্রান্ত মাসিক ম্যাগাজিনগুলোর প্রিলির বিশেষ সংখ্যা এবং প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট থেকে আপনার প্রিপারেশনের শেষ ঝালাইটা সেরে নেবেন।
—বাড়তি প্রস্তুতির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কিংবা আরিফুর রহমানের লেখা বাংলাদেশের সংবিধান; বাংলার জন্য ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা এবং অগ্রদূত বাংলা; ইংরেজি সাহিত্যের জন্য শরীফ হোসাইনের প্র্যাকটিক্যাল হ্যান্ডবুক, গ্রামারের জন্য মাস্টার; গণিতের জন্য খায়রুলস বেসিক ম্যাথ; বিজ্ঞানের জন্য জামিলস বিজ্ঞান; বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য আজকের বিশ্ব বইগুলো দেখতে পারেন।
—পুরো রেফারেন্স বই বা বোর্ড বই পড়ে সময় নষ্ট না করে, এসব বই থেকে সামারি করে প্রস্তুত করা গাইড বই পড়লে অর্ধেক সময় বেঁচে যাবে।

পাস করলেই হলো : প্রিলির হলো রিটেনে অংশ নেওয়ার ‘ইয়েস কার্ড’ পাওয়ার পরীক্ষা। ক্যাডার পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু রিটেন ও ভাইভার নম্বর যোগ হবে। তাই প্রিলিতে কাট মার্কস বা সর্বনিম্ন নম্বর (পিএসসি নির্ধারণ করে থাকে এবং একেক বিসিএসে একেক রকম হয়) পেয়ে পাস করলেও কোনো সমস্যা নেই। অনেক সময় প্রশ্নপত্রে কনফিউজিং প্রশ্ন দেওয়া থাকে, যেগুলোতে সময় নষ্ট হয়। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেগুলো পাড়বেন সেগুলোতে আগে সময় দিন। প্রিলিতে সব বই পড়ে কিংবা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ২০০-তে ২০০-ই পেতে হবে, এমনটি ভেবে চাপ নেওয়ার দরকার নেই।

দুর্বলতা নিয়ে দুশ্চিন্তা নয় : সব বিষয়ে সবার সমান দক্ষতা থাকে না। কোনো বিষয়ে আপনার দুর্বলতা থাকলেও প্রিলিতে পাস করা সম্ভব। প্রিলিতে যেহেতু প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদা পাস করতে হয় না, তাই পুরো ইংরেজি অংশ (৩৫ নম্বর) বাদ দিলেও ১৬৫ নম্বর অথবা পুরো গণিত অংশ (১৫ নম্বর) বাদ দিলেও ১৮৫ নম্বর থেকেই প্রিলিতে পাস করা সম্ভব! তাই কোনো বিষয়ে আপনার দুর্বলতা থাকলে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে দুর্বলতা কাটানোয় মন দিন।

প্রার্থী অনেক, প্রতিযোগী কম : বিসিএস প্রিলির প্রার্থী বহু হলেও আদতে আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থীর সংখ্যা থাকে ৮-১০ শতাংশের মতো। এখান থেকেই ৪-৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী প্রিলিতে পাস করে (৪০তম বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪,১২,৫৩২ জন এবং প্রিলিতে পাস করেছিলেন ২০,২৭৭ জন, যা মোট আবেদনকারীর ৪.৯১ শতাংশ)। তাই আবেদনকারীর সংখ্যার দিকে না তাকিয়ে আপনার একটা মাত্র চাকরি দরকার, এটি ভাবুন এবং নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিন।

পড়ে যান, মূল্যায়ন করুন : বেশির ভাগ প্রার্থীর কমন একটি জিজ্ঞাসা হলো—‘অনেক কিছু পড়ছি, কিন্তু মনে থাকে না।’ সব কিছু পড়ে শতভাগ মনে রাখা অনেকের ক্ষেত্রেই সম্ভব না। আপনি আপনার মতো পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনেক কিছু পড়ে, এর কিছুটা ভুলে, কিছুটা মনে রাখার নামই শিক্ষা। কেউ কেউ জানতে চান, ‘কতক্ষণ পড়তে হবে?’ এটি আপনার মেধা ও সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। তবে আপনি সর্বোচ্চটাই দেওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রিলি পাসের জন্য শুধু স্মরণশক্তি থাকলেই হয় না, সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞান, মেধা, সিক্স সেন্স—সব কিছুর সমন্বয় করতে হয়। অন্যরা কী পারে-না পারে, সেদিকে লক্ষ না রেখে আপনার দুদিন আগের অবস্থা আর আজকের অবস্থার জ্ঞানগত অগ্রগতি বা পরিবর্তনকে মূল্যায়ন করুন।

মডেল টেস্ট : প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ হয়ে আসার পর বাসায় বসে সময় ধরে নিজে নিজে মডেল টেস্ট দিন। কতগুলো সঠিক হচ্ছে; অজানা প্রশ্নগুলো সিক্স সেন্স থেকে উত্তর করলে সঠিক হওয়ার সম্ভাব্যতা কতটুকু, সব কিছুই পর্যালোচনা করবেন। বাজারে প্রিলির নমুনা প্রশ্নের আদলে মডেল টেস্টের বই খুঁজলেই পাবেন।

স্বাভাবিক থাকুন : বিসিএসের প্রস্তুতি মানে সারা দিন বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা নয়। স্বাভাবিক জীবনের মতোই টিভি নিউজ, পত্রিকা, খেলা, চলচ্চিত্র (ইংরেজি, বাংলা) দেখুন; কবিতা, গল্প-উপন্যাস পড়ুন; আড্ডা দিন। সময় পেলে দেশের উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলো দেখুন। এগুলো থেকেও প্রশ্ন হয়।

সূত্র : কালের কন্ঠ । চাকরি আছে । ৪ জানুয়ারি ২০২০

এডু ডেইলি ২৪

Education, News and Information-based portal

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *