এ এইচ সবুজ, গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়ার বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় ব্যাপক আলোচনায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গরু সমিতি। এটি মাংস বা গোশত সমিতি নামেও পরিচিত। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা মিলেমিশে ৩০/৫০ জনের সমিতি রয়েছে। আর এ সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমিতির জমানো টাকায় গরু বা মহিষ কিনে ঈদের আগে জবাই করে গোশত ভাগ করে নেওয়া। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এই ‘গোশত সমিতি’র মূল উদ্দেশ্য।
প্রায় ৩-৪ বছর আগে থেকে কাপাসিয়া উপজেলায় এ প্রথা চালু হলেও এখন ঘরে ঘরে সমিতি রয়েছে। প্রথম দিকে সমিতির কথা শুনে অনেকে অবাক হলেও বর্তমানে লোকজন এ সমিতির প্রতি বেশ আকৃষ্ট। এরপর থেকে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের মাংস বা গোশত সমিতি গঠন করা হয়।
সমিতিতে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর বাড়ছে সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ ও ১০০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিজন সদস্য প্রতি মাসে সমিতিতে ৫শ থেকে ১ হাজার অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদুল ফিতরের ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ একত্র করে পশু কেনা হয়। ঈদের দিন বা তার দু-একদিন আগেই এই পশু জবাই করে সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবাই বাড়তি আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।
স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম ‘গোশত বা মাংস সমিতি’। অনেকের কাছে ‘গরু সমিতি’ নামেও পরিচিত।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এ ধরনের আরো অনেক সমিতি গড়ে উঠেছে। ২৭ রমজান থেকে শুরু হয় সমিতির পশু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত।
উপজেলার ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও ফকিরবাড়ি এলাকার একটি সমিতির উদ্যোক্তা সাজেদুল ইসলাম জানান, সমিতিতে এবার ৭০ জন সদস্য। প্রতি মাসে সদস্য প্রতি ৪শ টাকা করে ১১ মাসে ৪ হাজার ৪ শত টাকা জমা রেখেন। সেই টাকা দিয়ে এ বছর কেনা গরু ঈদের আগে রাতে জবাই করে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। তুলনামূলক বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং একসঙ্গে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি।
এ বিষয়ে সমিতির আরো কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, এলাকায় গরু সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সমিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গরুর মাংসের উচ্চমূল্য থাকলেও সমিতির কারণে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত রান্না হয়। এ ধরনের সমিতির কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরো জোরদার হয়ে উঠেছে।