ঢাকা টু ভাঙ্গা ট্রেনের ভাড়া ও ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩

ঢাকা টু ভাঙ্গা ট্রেনের ভাড়া ও ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩ (প্রস্তাবিত) [Dhaka to bhanga train ticket fare and schedule] প্রকাশিত হয়েছে। ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা-ভাঙ্গা রেল রুট এদিন উদ্বোধন করা হলেও এই রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে আরো সময় লাগবে। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে যশোর পর্যন্ত রেললাইন চালু হবে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে।

এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে খুলে দেয়া হলো এবং এর যশোর সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সার্ভিস উদ্বোধন হলো। গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়।

এর আগে, পদ্মা সেতুতে পাথরহীন রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এক নজরে ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন রুট

গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১,০৩৬.৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার পর রেল যোগাযোগ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী শহরের প্রবেশ পথ আরও বর্ধিত হবে- যা মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে। প্রকল্পটি ঢাকা-যশোর-খুলনাকে ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট দিয়ে বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপন করবে।

এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী ও বিজি কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কনটেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।

ঢাকা ভাঙ্গা রেল ভাড়া কত রাখার প্রস্তাব

ঢাকার কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, নিমতলী, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, শিবচর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। রেলের এসি কামরায় প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। এ হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা ১৫০ টাকা। সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। কিন্তু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। ফলে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে এসি কেবিনের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৯১৫ টাকা। ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ৫২ টাকা। সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশনে শোভন শ্রেণিতে ২৫০, শোভন চেয়ারে ৩০৫, ফার্স্ট ক্লাসে ৪০৫, কেবিনে ৬১০, এসিতে ৫০৫, এসি সিটে ৬১০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস, কেবিন ও এসিতে ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

ঢাকা থেকে মাওয়ার দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার। কিন্তু ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাবে দূরত্ব বিবেচনা করা হয়েছে ১৩৩ কিলোমিটার। শোভন শ্রেণিতে ৯০, শোভন চেয়ারে ১১০, ফার্স্ট ক্লাসে ১৪৫, কেবিনে ২২০, এসিতে ১৮০, এসি সিটে ২২০ ও এসি কেবিনে ৩৩০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাটসহ কেবিনের ভাড়া ৩৮০ টাকা।

ঢাকা থেকে মাওয়া এবং ভাঙ্গা পর্যন্ত বাসে যে ভাড়া, ট্রেনে এর চেয়ে বেশি লাগবে প্রস্তাবিত তালিকা অনুমোদিত হলে। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পন্টেজ চার্জের কারণে ভাড়া বেড়েছে। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই দূরত্বকে ২৫ দিয়ে গুণ করা হয়েছে। একেই পন্টেজ চার্জ বলা হয়।

কেরানীগঞ্জে ভায়াডাক্টের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু সংযোগ। এটিই দেশের প্রথম উড়াল রেলপথ। ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্টকে ৬ দিয়ে গুণ করে দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কারণে ৭৭ কিলোমিটার দূরত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার।

শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। মেইল, কমিউটার ও লোকালসহ আরও তিন ধরনের ট্রেন পরিচালনা করে রেলওয়ে। সেগুলোর ভাড়া কম হবে। সব ট্রেনেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার হিসাবে। এসি শ্রেণিতে আন্তঃনগরে কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। সেতুর জন্য পয়েন্ট চার্জ যুক্ত হয়। ছয়টি সেতুতে এই চার্জ আদায় করে রেলওয়ে। যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চালানোর জন্য সেতু বিভাগকে বছরে এক কোটি টাকা ট্যারিফ দেয় রেলওয়ে।

পদ্মা সেতুতে ৩০ বছরের জন্য রেলওয়ের কাছে সোয়া ছয় হাজার কোটি টাকার ট্যারিফ চেয়েছে সেতু বিভাগ। প্রথম বছরে ১০৬ কোটি টাকা দিতে হবে। রেল এত টাকা দিতে নারাজ। তবে এই ট্যারিফের কারণেই ভাড়া বেড়েছে বলে রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য। তারা জানিয়েছেন, বছরে শতকোটি টাকা দিতে হলে ভাড়া আরও বাড়াতে হবে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় নির্মাণ করা পদ্মা রেল সংযোগকে লাভজনক করতে।

ঢাকা-যশোর রুটের দূরত্ব পদ্মা সেতুর কারণে কমে হবে ১৬৯ কিলোমিটার। কিন্তু ভাড়া নির্ধারণে পন্টেজ চার্জ বিবেচনা করে দূরত্ব ধরা হয়েছে ৬০৮ কিলোমিটার। ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ারের বর্তমান ভাড়া ৪৮৫ টাকা। ভ্যাটসহ স্নিগ্ধায় (এসি) ভাড়া ৯৩২ টাকা। এসি কেবিনের ভাড়া ভ্যাটসহ ১ হাজার ৬৭৪ টাকা। বেনাপোল এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল শুরুর পর শোভনে ৪৯৫, শোভন চেয়ারে ৫৯০, ফার্স্ট ক্লাসে ৭৯০, কেবিনে ১ হাজার ১৮০, এসিতে ৯৮৫, এসি সিটে ১ হাজার ১৮০ ও এসি কেবিনে ১ হাজার ৭৭০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস, কেবিন ও এসিতে ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। প্রস্তাবিত তালিকা অনুমোদন পেলে এসি কেবিনে ভ্যাটসহ ভাড়া পড়বে ২ হাজার ৩৬ টাকা।

ঢাকা-রাজশাহী রুটে শোভন চেয়ারের বর্তমানে ভাড়া ৩৪০ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করলে এই শ্রেণিতে ভাড়া লাগবে ৫৮০ টাকা। এই রুটে এসি সিটে ভাড়া ভ্যাটসহ ৭৮২ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চালুর পর ভ্যাট ছাড়াই এই শ্রেণিতে ভাড়া লাগবে ১ হাজার ১৫৫ টাকা। এসিতে বর্তমান ভাড়া ভ্যাটসহ ৬৫৬ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চালুর পর ভ্যাট ছাড়াই ভাড়া হবে ৯৬৫ টাকা।

সুন্দরবন এক্সপ্রেসের জন্য ২৯টি স্টেশনের এবং বেনাপোল ও মধুমতি এক্সপ্রেসের জন্য ২৮টি স্টেশন ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ৪৫ টাকা। এসিতে সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১০০ টাকা।

ঢাকা টু ভাঙ্গা ট্রেনের ভাড়া তালিকা

dhaka khulna train chart
ঢাকা টু ভাঙ্গা ট্রেনের ভাড়া তালিকা

ঢাকা টু ভাঙ্গা ট্রেনের সময়সূচী

বিস্তারিত সময়সূচি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে আপাতত পদ্মা সেতু হয়ে চলবে ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস। রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটের মধুমতি এক্সপ্রেসকে ঢাকা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। ট্রেনগুলো ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী দিয়ে গন্তব্যে যাবে। বর্তমানে ট্রেন দুটি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ঘুরে তথা টঙ্গী, জয়দেবপুর, যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে যায়। রাজবাড়ী থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে ঈশ্বরদী-রাজশাহী যায় মধুমতি এক্সপ্রেস। এই ৩ ট্রেনের নতুন ভাড়ার তালিকা প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের কমিটি। তা রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে কার্যকর হবে।

২০২৪ সালের জুনে যশোর পর্যন্ত রেললাইন চালু হবে। 

ঢাকা থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব কত কিলোমিটার ও কতক্ষণ লাগবে যেতে?

ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এই পথটুকু পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট।