গত কয়েক দশকের ধারাবাহিক পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় চীনজুড়ে মোট ১০২টি প্রস্রবণে এখন প্রবাহিত হচ্ছে টলটলে পানি। শুধু প্রকৃতি নয়, স্থানীয় সংস্কৃতি, সৃজনশীল শিল্প ও পর্যটন খাতেও লেগেছে নতুন জোয়ার।
শানতোং প্রদেশের রাজধানী চিনান শহরকে বলা হয় প্রস্রবণের শহর। এখানে রয়েছে বারোশ’রও বেশি প্রাকৃতিক প্রস্রবণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বাওতু স্প্রিং, যা এ শহরের একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ১৯৬৬ সালের পর এবার এই প্রস্রবণে পানির স্তর রেকর্ড ৩০.২৯ মিটারে পৌঁছেছে।
আগে এমন সময়ও গেছে, যখন টানা ৯২৬ দিন শুকনো থাকতো এই স্প্রিং। তাই স্থানীয় সরকার গত কয়েক বছর ধরে পানি পুনঃসরবরাহ, খালবিল পরিষ্কার ও আশপাশের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। এখন বাওতুর তিনটি জলধারা একটানা ফোয়ারার মতো ছুটে চলছে।
স্থানীয় ডিজাইনার লিউ সিনইয়া জানালেন, ‘আগে শুনতাম এই স্প্রিংটি দীর্ঘদিন শুকিয়ে ছিল। এখন এটি শুধু শহরের রূপ বদলায়নি, আমাদের ডিজাইন কাজেও নতুন ভাবনা এনে দিয়েছে।’
শানসি প্রদেশের চিনসি মন্দিরেও ফিরেছে প্রাণ। এখানকার নানলাও স্প্রিং-এর মুখে প্রাচীন পাথরের ড্রাগনের মুখ থেকে অঝোরে ঝরছে পরিচ্ছন্ন পানি—যা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা।
একসময় চিনসির প্রচুর ভূগর্ভস্থ জলাশয় থেকে আশপাশের ধানক্ষেতে সেচ দেওয়া হতো। ১৯৫০-এর দশকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন ও কয়লা খনির কারণে স্প্রিংটি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ২০০৮ সালে আশপাশের পানির স্তর স্প্রিংয়ের মুখ থেকে ২৭ মিটার নিচে নেমে গিয়েছিল।
প্রায় তিন দশকের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় ২০২৩ সালের মে মাসে নানলাও স্প্রিং আবারও প্রাকৃতিকভাবে ফোয়ারার মতো প্রবাহিত হতে শুরু করে। এখন এটি ৩৩২ দিনই সচল থাকে। আশপাশের গ্রামগুলোতে কৃষি, সংস্কৃতি ও পর্যটনেও এনেছে নতুন প্রাণ।
স্থানীয় আলোকচিত্রী চাও চিনশেং জানালেন, ‘গত কয়েক বছরে পানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কয়লা খনিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ এবং সবুজায়ন জোরদারের মতো একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে নানলাও ঝরনাটি ২০২৩ সালের মে মাসে আবারও প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং এখন এর পানি প্রবাহ স্থিতিশীল রয়েছে। একদম শৈশবে যেমনটা দেখেছিলাম, প্রস্রবণটি তেমনই আছে। এর ফলে চিনসি মন্দিরে পর্যটক বেড়েছে।’
হবেই প্রদেশের সিংথাই শহরেও একের পর এক শুকিয়ে যাওয়া স্প্রিং আবার জেগে উঠছে। একসময় নগরায়ণ ও শিল্পায়নের চাপে এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এত নেমে গিয়েছিল যে স্প্রিংগুলো সম্পূর্ণ হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বহু বছরের পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ফলে ২০২২ সাল থেকে সিংথাইয়েরর ১৬টি স্প্রিং আবারও প্রবাহিত হচ্ছে। এখানকার ৩৮৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাতেই এখন রয়েছে পর্যাপ্ত ভূগর্ভস্থ পানি।
শহরের একটি শিল্পকেন্দ্রের প্রধান লু লিচুন বললেন, ‘স্প্রিংগুলো আমাদের জীবনের অংশ। এগুলো ঘিরে আমরা পুরনো কারখানাগুলোকে সংস্কৃতি ও সৃজনশীল শিল্পকেন্দ্রে রূপান্তর করছি। মানুষ এখানে আসে ঝরনাধারার সৌন্দর্য দেখতে, শহরের সংস্কৃতি অনুভব করতে।’
চীনের এই পুনর্জীবিত প্রস্রবণগুলো শুধু পানি ফেরায়নি—পানির স্রোতের সঙ্গে নিয়ে এসেছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানুষে মানুষে সংযোগের নতুন সুযোগ।
সূত্র: সিএমজি বাংলা