বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডে ২৭.৫ শতাংশ কর আরোপ

২০২৩ সালের আইনে বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডে ২৭.৫ শতাংশ কর আরোপ করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর থেকে বেসরকারি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মচারী কল্যাণ তহবিল থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। শুধু তাই নয়, এই আয়ের ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

এছাড়াও বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক এবং করছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে, আয়কর আইনে সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডগুলোকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এবং বিধানটির সমালোচনা করছেন।

ফরেন ইনভেস্টার্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘কর আদায়ের আরও অনেক উপায় আছে। সাধারণত কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে উপকৃত হন। তাই অবসরকালীন সুবিধার ওপর সরকারের কর আরোপ করা উচিত নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবার কর আরোপের বিধানে বেসরকারি ও সরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডকে সমানভাবে বিবেচনা করা হয়নি, যা বৈষম্যমূলক।’

তারা প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর প্রত্যাহারের জন্য কর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান টিআইএম নুরুল কবির।

একজন বিশ্লেষক বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি বেসরকারি খাতে কর্মরতদের জন্য অবসরকালীন সুবিধা। বেসরকারি কর্মচারীরা বলছেন, যেহেতু এই ফান্ডগুলো এক ধরণের সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করে, তাই এগুলোর ওপর কোনো কর আরোপ করা হলে অবসরকালীন সুবিধা কমে যাবে।

নেসলে বাংলাদেশের করপোরেট বিষয়ক পরিচালক দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, ট্রাস্ট ফান্ডের ওপর আয়কর চালু হলে এ ধরনের স্কিম থেকে সামগ্রিক আয় কমবে। যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

তিনি বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়টি সমাধান করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু একটি ভালো দৃষ্টান্ত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাক্ট-১৯২৫ অনুযায়ী সরকার পরিচালিত প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আগে বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডে ছাড় দেওয়া হয়েছিল এবং ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ফলে এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

‘এখন থেকে আমরা সঠিক তথ্য জানতে পারব,’ বলেন তিনি। এই কর কর্মকর্তা বলেন, মোট আয়করে পে-রোল ট্যাক্সের অবদান প্রায় ৩ শতাংশ। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তা বাড়ানো উচিত।

ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। ‘সেদিক থেকে বিবেচনা করে প্রভিডেন্ট এবং অন্যান্য কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ওপর কর আরোপ করা ঠিক আছে বলে মনে হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

কিন্তু সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেসরকারি খাতের কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা কম। কারণ প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ তহবিল থেকে খুব কমই সামাজিক সুরক্ষা পাওয়া যায়। তাই কর আরোপের ফলে বৈষম্য বাড়বে।’

তিনি মন্তব্য করেন, বেসরকারি ও সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের মধ্যে কর আরোপের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য রাখা ঠিক হবে না।
আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর বদলে সর্বশেষ যে আয়কর আইন করা হয়েছে তার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এনবিআর কর আদায় ও রাজস্ব-মোট দেশজ উৎপাদন অনুপাত বৃদ্ধিতে নতুন পথ খোঁজার চেষ্টা করেছে, যা বিশ্বে বিরল।

তিনি মন্তব্য করেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, কর আদায় বাড়াতে কর কর্তৃপক্ষ মরিয়া, যা মূলত কর ফাঁকিদাতা ও অবৈধ অর্থ পাচারকারীদের ধরতে এনবিআরের অক্ষমতার বহি:প্রকাশ।’