কোরবানির গরু কেমন হওয়া উচিত | ইসলামি নির্দেশনা ও শর্তসমূহ
কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে।

কোরবানি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পদ ব্যয় করে পশু জবাইয়ের মাধ্যমে আদায় করা হয়। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব এবং এটি জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। ইসলামিক শরিয়ত কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত নির্ধারণ করেছে। সঠিকভাবে কোরবানি আদায়ের জন্য জেনে নিন কোরবানির গরু ও অন্যান্য পশু সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা।
কোন কোন পশু কোরবানির উপযোগী?
ইসলামি বিধান অনুযায়ী ছয় প্রকার পশু কোরবানির জন্য বৈধ:
মহিষ
উট
ছাগল
ভেড়া
দুম্বা
অন্যান্য কোনো পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়।
কোরবানির পশুর ন্যূনতম বয়স কত?
প্রতিটি পশুর জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম বয়স রয়েছে:
ছাগল/ভেড়া/দুম্বা: অন্তত ১ বছর বয়স, তবে ছয় মাস বয়সী ভেড়া যদি দেখতে ১ বছরের মতো হয় তবে তা গ্রহণযোগ্য।
গরু/মহিষ: কমপক্ষে ২ বছর পূর্ণ।
উট: কমপক্ষে ৫ বছর বয়স হতে হবে।
(সূত্র: হিদায়া ৪/১০৩)
এক পশুতে কয়জন অংশ নিতে পারবেন?
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা: শুধুমাত্র একজন কোরবানি করতে পারবেন।
গরু, মহিষ ও উট: সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবেন।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“একটি গরু বা উটে সাত ব্যক্তি শরিক হয়ে কোরবানি করতে পারে।”
(মুসলিম: ১৩১৮)
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত? (দোষত্রুটিমুক্ত পশু চেনার নিয়ম)
কোরবানির পশু অবশ্যই সুস্থ ও দোষমুক্ত হতে হবে। নিচের যেসব সমস্যাযুক্ত পশু কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়:
সম্পূর্ণ বা স্পষ্টভাবে অন্ধ
কানে তীব্র ক্ষত বা অধিকাংশ কাটা
লেজের বড় অংশ কাটা
গুরুতর অসুস্থ বা হাঁটতে অক্ষম
অতি দুর্বল ও কঙ্কালসার
এক বা একাধিক শিং গোড়া থেকে উপড়ে যাওয়া
একাধিক দাঁত না থাকা
স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া
ছাগলের যেকোনো একটি দুধ কাটা
গরু/মহিষের দুই বা ততোধিক দুধ কাটা
পাগল হয়ে ঘাস-পানি না খাওয়া
জন্মগতভাবে কান না থাকা
রাসুল (সা.) বলেছেন:
“চার প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ নয়— অন্ধ, রোগাক্রান্ত, পঙ্গু ও এমন আহত যার অঙ্গ ভেঙে গেছে।”
(ইবনে মাজাহ: ৩১৪৪)
কোরবানির গরু নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
কোরবানির গরুর বয়স কত হলে কোরবানি করা যায়?
কমপক্ষে দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। এটি শরিয়তের নির্ধারিত শর্ত। এর চেয়ে কম বয়স হলে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না।
ছয় মাসের ভেড়া দিয়ে কি কোরবানি দেওয়া যায়?
যদি ছয় মাস বয়সী ভেড়া দেখতে এক বছর বয়সের মতো মোটা-তাজা হয়, তবে তা কোরবানির জন্য বৈধ।
কোরবানির জন্য কোন কোন দোষ থাকলে পশু গ্রহণযোগ্য নয়?
অন্ধ, ল্যাংড়া, অতিমাত্রায় দুর্বল, কান বা লেজ কাটা, পাগল, দাঁত বা স্তনের ত্রুটিযুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়।
গরুতে কয়জন শরিক হতে পারে?
একটি গরুতে সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হতে পারেন, তবে প্রত্যেকের নিয়ত ও অংশের টাকা আলাদা ও হালাল হতে হবে।
ছাগল বা দুম্বা কয়জনের জন্য কোরবানি হিসেবে গৃহীত হয়?
একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা শুধুমাত্র একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি হিসেবে আদায় করা যায়।
কোরবানির সময়সীমা কতদিন?
কোরবানি করা যায় জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে, ঈদের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে কী কী লক্ষ্য রাখা উচিত?
পশুর বয়স ও স্বাস্থ্য যাচাই
শরিয়তের নির্ধারিত দোষত্রুটি নেই কিনা তা নিশ্চিত করা
নিয়ত সহিহ রাখা
অসুস্থ গরু কোরবানির জন্য বৈধ কি?
যদি গরুটি এমনভাবে অসুস্থ হয় যে তা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ও দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে তা অগ্রহণযোগ্য। তবে হালকা জ্বর বা অস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হলে বৈধ হতে পারে।
কোরবানি শুধুমাত্র পশু জবাই নয়, বরং এটি ত্যাগ ও আত্মার পরিশুদ্ধির প্রতীক। তাই কোরবানির পশু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। শরিয়তের নির্দেশনা অনুসরণ করেই কোরবানি দিলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার আশা করা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহভাবে কোরবানি করার তাওফিক দিন, আমিন।