রেলওয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতি ও প্রস্তুতি

রেলওয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতি, প্রস্তুতি ও পরীক্ষার তথ্য নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে মোট ৫৮৬ জনকে চাকরি দেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই পদের নিয়োগ পরীক্ষা ৬ আগস্ট ২০২২। মোট ৩,৪৫,৭৩৪ জন প্রার্থী সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টার পদের নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ, সময়সূচি, কেন্দ্রভিত্তিক আসন বিন্যাস ও নিদের্শাবলী (pdf link) : https://railway.gov.bd অথবা CLICK

 

 

 

এন নজরে সহকারী স্টেশন মাস্টার পরীক্ষা

প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ রেলওয়ে
পদের সংখ্যা : সহকারী স্টেশন মাস্টার
পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতি : MCQ
পরীক্ষার নাম্বার : লিখিত (এমসিকিউ) -৭০
ও মৌখিক-৩০
সর্বনিম্ন পাশ নম্বর : ৫০ শতাংশ
পরীক্ষা পরিচালনা প্রতিষ্ঠান : বুয়েট (সম্ভাব্য)
পদের সংখ্যা : ৫৬০টি
প্রার্থী সংখ্যা : প্রায় সাড়ে ৩ লাখ
পরীক্ষার তারিখ : ৬ আগস্ট ২০২২

 

 

 

নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়, নম্বর ও সময়

সহকারী স্টেশন মাস্টার পদের নিয়োগ পরীক্ষা হবে ২ ধাপে। প্রথমে লিখিত পরীক্ষা হবে ৭০ নম্বরে। সময় বরাদ্দ ৯০ মিনিট। লিখিত পরীক্ষায় সর্বনিম্ন পাস নম্বর ৫০ শতাংশ অর্থাৎ কমপক্ষে ৩৫ নম্বর পেতে হবে।

লিখিত পরীক্ষা হবে বাংলা-২০, ইংরেজি-২০, গণিত-১৫ ও সাধারণ জ্ঞান-১৫ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তর সাধারণত দুই-এক বাক্যে বা এক কথায় লিখতেই হয়। শুধু গণিতের ক্ষেত্রে সমাধান করে দেখিয়ে দিতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর ১। কোনো নেগেটিভ মার্কিং নেই। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ৩০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।

 

 

বিষয় ভিত্তিক সাজেশন ও পরীক্ষার প্রস্তুতি

 

বাংলা :

বাংলা বিষয়ে দুটি অংশে প্রশ্ন আসবে, ১. সাহিত্য ও ২. ব্যাকরণ। সাহিত্য অংশের জন্য শুরুতে বিগত বিসিএস, নন-ক্যাডার, সহকারী স্টেশন মাস্টারসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়লে প্রস্তুতিতে বেশ কাজে দেবে। বিগত বছরগুলোর বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে অনেক প্রশ্নই কমন পড়ে। এরপর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ের লেখক পরিচিত খেয়াল করে পড়বেন। পাঠ্য বই থেকে পড়তে না পারলে চাকরির প্রস্তুতির গাইড বই থেকে পড়ে বিভিন্ন লেখক সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। বিস্তারিত পড়বেন প্রাচীন যুগের চর্যাপদ, মধ্যযুগ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, শামসুর রাহমান, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে। প্রয়োজনে এই কয়জন লেখক-সাহিত্যিকের রচনাগুলো ছন্দ বা কৌশল বানিয়ে মনে রাখবেন। এখান থেকে প্রতিবছরই একাধিক প্রশ্ন আসে। তারপর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কয়েকটি গল্প, উপন্যাস ও নাটক এবং বিভিন্ন সাহিত্যিকের ছদ্মনাম ও উপাধি পড়লে আশা করা যায় বাংলা সাহিত্য নিয়ে আর টেনশন করতে হবে না।

 

 

বাংলায় ব্যাকরণ অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। তাই সাহিত্যের চেয়ে ব্যাকরণ অংশে বেশি জোর দিতে হবে। যেসব টপিকস থেকে প্রতিবছর প্রশ্ন আসে, সেগুলো হলো—এককথায় প্রকাশ/বাক্য সংকোচন, বাগধারা, কারক-বিভক্তি, সন্ধি, বানান শুদ্ধি, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, শব্দের প্রকারভেদ (কোনটা কোন দেশি শব্দ), সাধু ও চলিত রূপ, সমাস, পদ প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, পরিভাষা, উপসর্গ প্রভৃতি। এ ছাড়া আরো ভালো প্রস্তুতির জন্য ব্যাকরণের অন্যান্য টপিকস থেকেও অনুশীলন করতে পারেন। ব্যাকরণের প্রস্তুতি নিতে হবে মুনীর চৌধুরী রচিত নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে। আর অনুশীলনের জন্য বাজারের ভালো মানের কোনো একটা প্রকাশনীর বই পড়া যেতে পারে, বিশেষ করে প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে দেওয়া বিগত সালের প্রশ্নগুলো। ভালো মানের একটা বই-ই যথেষ্ট। একাধিক বই কেনার প্রয়োজন নেই।

 

 

ইংরেজি :

ইংরেজিও ২টি অংশ- লিটারেচার ও গ্রামার। লিটারেচার থেকে খুবই কম প্রশ্ন আসে। অতীতের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে লিটারেচার থেকে দুই-তিনটি প্রশ্ন এসেছে। কোনো কোনো পরীক্ষায় একটি প্রশ্নও আসেনি। তবু সেরা প্রস্তুতির জন্য এগুলোও পড়তে হবে, বিশেষ করে বিগত সালে আসা বিসিএস, নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো। Shakespeare, John Milton, Wordsworthসহ যাঁরা বিখ্যাত লেখক তাঁদের সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নিয়ে যাবেন।

 

গুরুত্ব সহকারে প্রস্তুতি নিতে হবে গ্রামার অংশে। বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—যেসব টপিকস থেকে অধিক প্রশ্ন আসে, সেগুলো হলো : 1. Parts of Speech, 2. Identification of Parts of Speech, 3. Interchange Parts of speech, 4. Phrase & Clause, 5. Gerund & Participle, 6. Number & Gender, 7. Preposition, 8. Right form or Verb, 9. Voice & Narration, 10. Subject-Verb Agreement, 12. Conditional Sentence, 13. Synonym, Antonym, 14. Spelling, 15. One word substitutions, 16. Changing sentence প্রভৃতি।

 

ইংরেজি অংশের প্রস্তুতির জন্য বাজারের ভালো মানের কোনো একটা প্রকাশনীর বই পড়লেই যথেষ্ট। একাধিক বই নিলে বেশি পড়তে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলেন অনেকে। তবে বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন বই নির্বাচন করতে হবে, যেখানে বিগত সালের প্রশ্ন বেশি দেওয়া আছে এবং তথ্যগুলো নির্ভুল।

 

 

গণিত :

এই পদের আগের পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গণিতেও কিছু নির্দিষ্ট টপিকস থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে। বিগত সালের প্রশ্নগুলো বুঝে বুঝে অনুশীলন করতে হবে। শুধু বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করলেও প্রস্তুতি অনেকটা হয়ে যাবে। তবে যাঁদের গণিতের বেসিক দুর্বল, তাঁদের একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে।

 

গণিতকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি। পাটিগণিত থেকেই ৯-১০টির মতো প্রশ্ন থাকে। এই অংশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গণিতের প্রস্তুতির জন্য পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণির গণিত বই থেকে পাটিগণিত বুঝে বুঝে করবেন। এখনো পরীক্ষার যতটুকু সময় আছে, তাতে নিয়মিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করে গণিতে ভালো করা সম্ভব।

পাটিগণিতের যেসব টপিকস থেকে বেশি প্রশ্ন আসে—মুনাফা, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, অনুপাত, মৌলিক ও বাস্তব সংখ্যা, ঐকিক নিয়ম, বয়স, ভগ্নাংশ, গড়, সময় ও দূরত্ব, লসাগু ও গসাগু প্রভৃতি।

 

বীজগণিত থেকে সাধারণত তিন-চারটি অঙ্ক আসে। প্রস্তুতির জন্য বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এসব টপিকসে— বীজগাণিতিক রাশি, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, মান নির্ণয়, এক চলক ও দ্বিচলকবিশিষ্ট সমীকরণ, সূচক, লগারিদম ও ধারা প্রভৃতি। গণিতের শেষ অংশ হলো জ্যামিতি। জ্যামিতি থেকে দু-একটা প্রশ্ন আসে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস—রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, বৃত্ত, পরিমিতিতে বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র ও সমকোণী ত্রিভুজসংক্রান্ত সমস্যা প্রভৃতি। গণিতে নিয়মিত অনুশীলনই সফলতা আনতে পারে।

 

 

সাধারণ জ্ঞান :

 

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে ২ ধরনের প্রশ্ন হয়, এগুলো হলো- সাম্প্রতিক বিষয় আর মৌলিক বিষয়। সাধারণ জ্ঞানের পরিধি বিশাল, তাই প্রস্তুতিও নিতে হবে ব্যাপকভাবে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি বিষয় থেকে সাধারণত বেশি প্রশ্ন আসে। যেমন—বাংলার ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সংবিধান, বাংলাদেশ পরিচিতি, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে রেলওয়ে, বাংলাদেশের সম্পদ, বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, খেলাধুলা প্রভৃতি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজধানী ও মুদ্রা, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য (পর্বত, সাগর, প্রণালী, খাল), গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন, চুক্তি, খেলাধুলা প্রভৃতি।

 

সাধারণ জ্ঞানে ভালো প্রস্তুতির জন্য দৈনিক পত্রিকার অর্থনৈতিক পাতা, আন্তর্জাতিক ও উপ-সম্পাদকীয় নিয়মিত পড়তে হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত খাতায় নোট করে রাখা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর নিয়মিত শোনার অভ্যাস থাকলে খুব ভালো। এ ছাড়া বাজারের ভালো মানের সাধারণ জ্ঞানের গাইড বইও চাইলে পড়তে পারেন।

 

রেলওয়ে নিয়োগ প্রশ্ন প্যাটার্ন

বিগত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখুন।

 

আরো দেখুন : রেলওয়েতে সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগ পরীক্ষার বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন ও সমাধান