মো. হাবিবুর রহমান পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগে। তিনি ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
চেয়ারম্যান : আপনার পছন্দক্রম—প্রশাসন, কাস্টমস, ট্যাক্স, অডিট, তাই না?
আমি : জি, স্যার।
আচ্ছা বলেন তো, অর্থনীতিতে পিপিপি বলতে কী বোঝায়?
—স্যার, পিপিপি বলতে বোঝায় পারচেজিং পাওয়ার প্রায়োরিটি, এর বাংলা অর্থ ক্রয়ক্ষমতা সমতা। এটি হলো এক ধরনের মাপকাঠি, যা ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন দেশের মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা তুলনা করতে পারি।
পিপিপির সঙ্গে জিডিপির সম্পর্ক কী?
—স্যার, পিপিপি মডেলে জিডিপি ক্যালকুলেট করলে ডলারের কনভার্সন রেটের কারণে আমাদের জিডিপি বেড়ে যাবে।
কী রকম?
—যেমন ধরুন, আমেরিকায় আমি কোনো একটা পণ্য ১ ডলারে কিনতে পারি। বাংলাদেশে ওই পণ্যের দাম ৫০ টাকা। কিন্তু কনভার্সন রেট ১১৫ টাকা হিসাব করলে, আমেরিকার এক ডলার দিয়ে আমি বাংলাদেশে ওই পণ্যটির দ্বিগুণ পরিমাণ কিনতে পারব। অর্থাত্ বাংলাদেশে আসার কারণে আমার ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে গেল।
আচ্ছা, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কী, বলেন।
—স্যার, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও হলো, একটি দেশের জিডিপির মোট কত অংশ ট্যাক্স থেকে আসছে, সেটি।
বাংলাদেশে এর মান খুব কম, তাই না?
—জি, স্যার। দশের নিচে।
আচ্ছা, বলুন তো সরকার কী এমন পদক্ষেপ নিলে জিডিপি রেশিও এক লাফে ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে?
—স্যার, আমার মনে হয়, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই রেশিও অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। কারণ এতে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কাছে আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছ ধারণা থাকবে। ফলে কেউ চাইলেই ইচ্ছামতো কর ফাঁকি দিতে পারবে না। (চেয়ারম্যান স্যার সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন। রুমে থাকা দুজন এক্সটার্নালের সঙ্গে এই টপিক নিয়ে কথা বললেন।)
আচ্ছা, আপনার প্রথম পছন্দ তো বিসিএস প্রশাসন। ধরুন, আপনি একটি উপজেলার ইউএনও। সকাল ১১টা বাজে। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনটি ঘটনা চোখে পড়ল, আমি এখন ঘটনা তিনটি বলছি। আপনি ঘটনাগুলো শুনে ওই উপজেলা সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করবেন, সেটা বলবেন আমাদের।
ঘটনা-১ : কিছুসংখ্যক ছেলে স্কুল ড্রেস পরে মাঠে খেলছে।
ঘটনা-২ : প্রাপ্তবয়স্ক কিছু ছেলে একটা ঘরে জটলা করে আছে।
ঘটনা-৩ : চায়ের দোকানে বসে মধ্যবয়স্ক লোকজন আড্ডা দিচ্ছে।
—স্যার, এই সময়ে স্কুলগামী ছেলেদের স্কুলে থাকার কথা, কিন্তু ওরা খেলাধুলা করছে। তাই বলা যায়, স্কুলে ঠিকমতো তদারকি হয় না। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু ছেলে জটলা করে আছে, মানে আড্ডা দিচ্ছে। আর মধ্যবয়স্ক লোকজন এই সময়ে কাজে থাকার কথা। যেহেতু আড্ডা দিচ্ছে, মানে উপজেলায় কাজের সংকট আছে।
(স্যার ১ ও ৩ নম্বর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া আমার উত্তরে সম্মতি দিলেও দ্বিতীয় নম্বরের উত্তরটা নিলেন না। তিনি বললেন, যেহেতু প্রাপ্তবয়স্করা জটলা করে আছে, তার মানে তারা ভালো কিছু করছে না। এরপর তিনি এক্সটার্নাল-১ কে প্রশ্ন করতে বললেন।)
এক্সটার্নাল-১ : আপনি এখন কোথাও চাকরি করছেন?
আমি : স্যার, সোনালী ব্যাংকে আছি সিনিয়র অফিসার হিসেবে।
লোন সেকশন নাকি জেনারেল সেকশন?
—স্যার, জেনারেল সেকশনে।
আচ্ছা বলেন তো ব্যাংকে কয় ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়?
—স্যার, সেভিংস, কারেন্ট, ডিপোজিট…
কোন ধরনের অ্যাকাউন্টে কোনো ইন্টারেস্ট দিতে হয় না?
—স্যার, কারেন্ট অ্যাকাউন্টে কোনো ইন্টারেস্ট দিতে হয় না।
মনোপলি মার্কেট বলতে কী বোঝেন?
—স্যার, মনোপলি মার্কেট হলো এক ধরনের বাজার কাঠামো, যেখানে একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার একক সরবরাহকারী থাকে। মার্কেটে ওই সরবরাহকারীর একক আধিপত্য থাকে।
এই রুমে ভালো করে দেখে এ রকম একটা পণ্য বা সেবার নাম বলেন, যেটার মার্কেট মনোপলি?
(কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলতে পারলাম না, পরে স্যার বললেন ‘বিদ্যুত্’)।
আপনি তো সোনালী ব্যাংকে আছেন। সামপ্রতিক সময়ে সরকারের কোন প্রকল্পের সঙ্গে সোনালী ব্যাংক সরাসরি যুক্ত হয়েছে?
—সর্বজনীন পেনশন স্কিম, স্যার।
কয়টা স্কিম আছে? নাম বলেন।
—স্যার, ৪টি। প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস। (স্যার এবার এক্সটার্নাল-২ ম্যাডামের দিকে ইশারা দিলেন প্রশ্ন করতে)।
এক্সটার্নাল-২ : ভারতকে আমরা কোন কোন ক্ষেত্রে সুবিধা দিচ্ছি?
আমি : ম্যাডাম, ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট।
এর ফলে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অবনতি হবে না?
—ম্যাডাম, চীনও আমাদের বিভিন্ন উন্নয়নে বিনিয়োগ করতেছে, তারা সুদের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। ফলে দুদিক থেকেই ব্যালান্স হচ্ছে।
আপনার মতে এই মুহূর্তের প্রধান সামাজিক সমস্যা কী?
—দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
সরকার কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?
—ম্যাডাম, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফ্যাক্টর একটি বা দুটি না, অসংখ্য। সবগুলো একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনা সময়সাপেক্ষ ও লোকবলের প্রয়োজন। পাশাপাশি সব কিছু চাইলেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না, যেমন—ডলারের দাম, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব।
সূত্র: কালের কণ্ঠ