মো. সুলাইমান পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। তিনি ৪১তম বিসিএসে তথ্য (সাধারণ) ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
৪১তম বিসিএসের ভাইভা ছিল আমার প্রথম বিসিএস ভাইভা। ভাইভা হয়েছিল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ক্যাডার পছন্দক্রম ছিল যথাক্রমে প্রশাসন, কাস্টমস, তথ্য, ট্যাক্স প্রভৃতি। সম্পূর্ণ ভাইভা বাংলায় হয়েছে।
আমি : স্যার, আসতে পারি?
চেয়ারম্যান : আসেন।
আমি : আসসালামু আলাইকুম, স্যার (সবার দিকে তাকিয়ে আই কন্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করেছি)।
চেয়ারম্যান : এখন কী করেন?
আমি : পেট্রোবাংলার পিজিসিএলে সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদে কর্মরত…।
[তখনো বসতে না বলায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। চেয়ারম্যান স্যার এক্সটার্নাল-১ (ম্যাডাম)-কে ভাইভা শুরু করতে বলে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমাকে বসতে বললেন। স্যুটের বোতাম খুলে বসে, মাস্ক খুললাম। এক্সটার্নাল-১ আমার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেন।]
এক্সটার্নাল-১ : মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কয়টা? আপনার জেলা কত নম্বর সেক্টরে? সেক্টর কমান্ডার কে ছিলেন? নানাবাড়ি কোন জেলায়? কত নম্বর সেক্টর? কয়েকটা সেক্টরের সীমানা বলেন।
(সেক্টর কমান্ডারদের নামের আগে তাঁদের উপাধি যোগ করে বলেছি। নিজ থেকে ১, ২, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর সেক্টরের সীমানা বললাম। ধারাবাহিকভাবে মনে না থাকায় যেটা মাথায় আসছে, সেটা আগে বলেছি। ম্যাডামকে স্যার বলেই সম্বোধন করেছি)।
এক্সটার্নাল-২ : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি কী?
আমি : সংবিধানের ১২৩ নম্বর ধারা উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় নিয়ে সংবিধানের ১২৩(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
এক্সটার্নাল-২ : রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা কী?
আমি : সংবিধানের ৪৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হন; অপ্রকৃতিস্থ হন; বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক হন এবং নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
এক্সটার্নাল-২ : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কোথায় ভোট হয়? জনগণ ভোট দেয়?
আমি : না, স্যার। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমানে সংসদ সদস্যদের দ্বারা পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
এক্সটার্নাল-২ : রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে ১৮ বছর হলেই হবে, নাকি ২৫ বছর?
আমি : না, স্যার। ৩৫ বছর হতে হবে।
এক্সটার্নাল-২ : রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি নিয়ে কী যেন জানতে চাইলেন।
আমি : প্রশ্ন বুঝতে না পারায়, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস না করে আমি আন্তরিকভাবে স্যরি বললাম। আমার কাছে মনে হয়েছে প্রশ্নটা জানা থাকলে প্রথমবারেই বুঝতে পারতাম। যেহেতু প্রশ্নই বুঝিনি, সেহেতু দ্বিতীয়বার প্রশ্ন জানতে চেয়ে উত্তর না পারলে ইমপ্রেশন খারাপ হতে পারে। তাই রিস্ক নিলাম না।
এক্সটার্নাল-২ : ১৪ ডিসেম্বর কী দিবস এবং কেন? শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম বলেন।
আমি : নামের শুরুতে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী’ শব্দ জোড়া ব্যবহার করে মাত্র দুজনের নাম বললাম। আরো জানতে চাইলেন। কিন্তু আর কারো নাম মনে না পড়ায় সময় না নিয়ে স্যরি বললাম।
এক্সটার্নাল-২ : পদ্মা সেতু কিভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে?
আমি : পর্যটন বাড়বে, দুই পারে শিল্পায়ন ঘটবে, আমার এলাকার কৃষি উত্পাদন বৃদ্ধি পাবে, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাবে। বিশ্বব্যাংক তাদের এক গবেষণায় বলেছে, দরিদ্র বিমোচন হবে ০.৮৪ শতাংশ, বাংলাদেশের জিডিপি বাড়বে ১.২৩ শতাংশ। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২.৩ শতাংশ। যেহেতু আমাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলো পদ্মার এপারে সেতু হয়ে গ্যাস সংযোগ আসবে, পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দরের কর্মদক্ষতা বাড়বে ইত্যাদি
(চেয়ারম্যান স্যার এলেন)
চেয়ারম্যান : রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে হলে ফৌজদারি অপরাধে কী হতে পারবেন না?
আমি : স্যার, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
চেয়ারম্যান স্যার : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে কী বোঝেন?
আমি : সংবিধানের চারটি মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
চেয়ারম্যান : দেশপ্রেম কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন।
আমি : ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি, তাত্ত্বিক আলোচনায় যাইনি।
চেয়ারম্যান : এখন আপনি আসতে পারেন।
আমি : উঠে সালাম জানিয়ে কাগজপত্র নিয়ে প্রস্থান করলাম।
পরামর্শ: ভাইভা ভাগ্যের ব্যাপার! কাকে কী নিয়ে প্রশ্ন করবে কেউ জানে না। পঠিত সাবজেক্ট, ক্যাডার চয়েস, আমার বর্তমান চাকরি নিয়ে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো প্রশ্ন করা হয়নি।
আমার কাছে মনে হয়েছে—
১. আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্নের জবাব দেওয়া, নিজের উত্তরের ব্যাপারে ক্লিয়ার থাকা, আমতা আমতা না করা।
২. হাসিমুখে থাকা।
৩. সবার সঙ্গে আইকন্ট্রাক্ট।
৪. কোনো প্রশ্ন না পারলে আন্তরিকতার সঙ্গে সময়ক্ষেপণ না করে স্যরি বলা।
৫. আনুগত্যশীল ও বিনয়ী মানসিকতা।
৬. কথার মাঝে দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ
৭. টু দ্য পয়েন্ট উত্তর ইত্যাদি থাকলে একটা ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
সূত্র: কালের কণ্ঠ