পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে কৃষিতে স্নাতক করেছেন শেখ নাইমুর রশিদ লিখন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মকর্তা (জেনারেল-২০১৯ ব্যাচ) হিসেবে চাকরি পেয়েছেন। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক করেছি। ভাইভা হয়েছিল ১১ মে ২০২৩। ব্যাংক পছন্দক্রম ছিল যথাক্রমে বিডিবিএল, বিএইচবিএফসি, আরবিএল, বিকেবি প্রভৃতি। ভাইভা বোর্ডে সাত-আট মিনিটের মতো ছিলাম। সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছাই। এরপর হাতের লেখা মেলানো ও সার্টিফিকেট চেক করতে করতে ১১টার বেশি বেজে যায় । ১১টা ২০ মিনিটে বোর্ডে প্রবেশ করি। বোর্ডে চেয়ারম্যান স্যারসহ আরো তিনজন সদস্য ছিলেন।
চেয়ারম্যান : বাড়ি কোথায়?
আমি : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায়, স্যার।
চেয়ারম্যান : আপনার এলাকার কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম বলুন।
আমি : কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, কাজী ইমদাদুল হক, মৃণালিনী দেবী, ড. মশিউর রহমান প্রমুখ।
চেয়ারম্যান : মাস্টার্স করেছেন?
আমি : জি স্যার।
চেয়ারম্যান : কোন সাবজেক্ট? কোথা থেকে?
আমি : হর্টিকালচার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
চেয়ারম্যান : হর্টিকালচারের সংজ্ঞা বলুন তো।
আমি : এটি কৃষিবিজ্ঞানের একটি শাখা, যা উদ্যান ফসলের (সবজি, ফুল, ফল, মসলা প্রভৃতি) উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন, উন্নয়ন ও গবেষণার কাজ করে থাকে।
চেয়ারম্যান : জিডিপিতে কৃষির অবদান কত? এটি বাড়ছে, না কমছে?
আমি : ১১.৫০ শতাংশ, স্যার। এটি ক্রমান্বয়ে কমছে। কারণ শিল্প ও সেবা খাতে সামগ্রিক অবদান বাড়ছে এবং দেশ শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
চেয়ারম্যান : কৃষিতে উত্পাদনও কি কমে যাচ্ছে?
আমি : উত্পাদন বেড়েছে, স্যার। ধান, গমের উত্পাদন সমপরিমাণ জমিতে দু-তিন গুণ বেড়েছে। ১৯৭২ সালে খাদ্যশস্য উত্পাদন ১.০৮ কোটি মেট্রিক টন ছিল, এখন সেটি বেড়ে ৪.৫৪ কোটি মেট্রিক টন হয়েছে।
বোর্ড সদস্য-১ : আপনি তো কর্মকর্তা পদের ভাইভা দিতে এসেছেন। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার পাঁচটি গুণ বলুন, যা তাঁর দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে।
আমি : সততা, ধৈর্য, কর্তব্যপরায়ণতা, সৃজনশীলতা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
বোর্ড সদস্য-২ : ব্লু-ইকোনমি কী? এর কয়েকটি সেক্টর বলুন।
আমি : সমুদ্রকেন্দ্রিক যেকোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা দেশের জিপিডিতে যুক্ত হয়, তাকে ব্লু-ইকোনমি বলে। এর কয়েকটি সেক্টর হলো—বন্দর ব্যবস্থাপনা, আমদানি-রপ্তানি, মেরিটাইম শিপিং, পর্যটন, লবণ উত্পাদন, সামুুদ্রিক মত্স্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ।
বোর্ড সদস্য-২ : এর মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে কোনটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে?
আমি : সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন তা প্রমাণ করে।
চেয়ারম্যান : মনিটারি পলিসি ও ফিসকাল পলিসি কী? কে কোনটি নিয়ন্ত্রণ করে এবং একটি করে উদাহরণ বলুন।
আমি : ফিসকাল পলিসি সরকারের আয়-ব্যয়ের নীতি, যা অর্থ মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করে এবং মনিটারি পলিসি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রার হার, মান নিয়ন্ত্রণ।
(ফিসকাল পলিসির উদাহরণ বললাম যে অর্থবছর নির্ধারণ। তখন চেয়ারম্যান স্যার ধরিয়ে দিলেন আরো বড় একটি ব্যাপার আছে, যা কিছুদিন পরেই সংসদে পাস হবে। তখন বললাম—স্যার, বাজেট প্রণয়ন করা হবে)
বোর্ড সদস্য-৩ : আপনি তো কৃষির ছাত্র। আপনাকে লাস্ট একটি প্রশ্ন করি, পারলে এ প্লাস। বলুন তো, ক্লাউড সিডিং কী? কৃষির সঙ্গে এর সম্পর্ক কী?
আমি : স্যার, যেখানে সময়মতো বৃষ্টি হয় না, সেখানে ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। যেমন—মধ্যপ্রাচ্য ও চীনে আবহাওয়ার মোডিফিকেশন করা হয় এবং সিলভার আয়োডাইড প্রয়োগ করে মেঘ জড়ো করা হয়। মূলত পানিসংকট মোকাবেলা ও কৃষি সেচের পানি সরবরাহের জন্যই এটি করা হয়।
(এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিবিসি বা ডয়চে ভেলেতে দেখেছিলাম। সেখান থেকেই এটির উত্তর দিতে পেরেছি। শেষ প্রশ্নটি পারায় বোর্ডের সবাই প্রশংসা করলেন)
চেয়ারম্যান : আপনি কয়টি চাকরির ভাইভা দিয়েছেন?
আমি : তিন-চারটি দিয়েছি, স্যার।
চেয়ারম্যান : কর্মকর্তার লিখিত পরীক্ষা কেমন দিয়েছেন?
আমি : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো স্যার।
চেয়ারম্যান : ঠিক আছে, বেস্ট অব লাক।
সূত্র: কালের কণ্ঠ