লিজা আক্তার পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। মেধাক্রমে তিনি ছিলেন দশম। এটা ছিল তাঁর প্রথম বিসিএস। ভাইভা বোর্ডে ছিলেন ১৮ মিনিটের মতো। তাঁর ভাইভার অভিজ্ঞতা শুনেছেন আব্দুন নুর নাহিদ
আমি : অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। আসসালামু আলাইকুম, স্যার।
চেয়ারম্যান : বসুন।
আমি : ধন্যবাদ, স্যার।
চেয়ারম্যান : আপনি এখন কী করছেন?
আমি : আমি বর্তমানে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ স্যারের অধীনে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি।
চেয়ারম্যান : কী বিষয় নিয়ে রিসার্চ করছেন?
আমি : বাংলাদেশের পাবলিক হেলথকেয়ার সিস্টেমে কিভাবে প্রাইমারি লেভেল থেকে টারশিয়ারি লেভেল পর্যন্ত রেফারেল সিস্টেম বাস্তবায়ন করা যায় এবং কী কী সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
চেয়ারম্যান : প্রজেক্টের নামটা বলুন।
আমি : রেফারেল সিস্টেম ইন পাবলিক হেলথ সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ…।
চেয়ারম্যান : বর্তমানে কি আমাদের দেশে রেফারেল সিস্টেম চালু আছে?
আমি : আমার জানামতে স্বাস্থ্য খাতে রেফারেল সিস্টেম ব্যবহার করা হয় না। এ জন্য ঢাকা মেডিক্যাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের এত ভিড় থাকে।
চেয়ারম্যান : স্বাস্থ্য খাতে রেফারেল সিস্টেম বাস্তবায়িত হলে কী সুবিধা হবে?
আমি : প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেভেলের হাসপাতাল থেকে অনেক রোগী চিকিত্সা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফেরত যাবে। ফলে টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় কমবে এবং যাদের আসলেই প্রয়োজন, তারা চিকিত্সাটা পাবে।
চেয়ারম্যান : আপনি কিভাবে বান্দরবানের মতো একটা দুর্গম এলাকায় টারশিয়ারি লেভেলের চিকিত্সা পৌঁছে দেবেন?
আমি : টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে।
চেয়ারম্যান : দুর্গম এলাকায় বিশেষ প্রয়োজনে আপনি কিভাবে একটা অপারেশন করবেন?
আমি : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে।
এক্সটার্নাল-১ : কৃষকদের বাঁচাতে আমরা কী করতে পারি?
আমি : আমাদের দেশ যেহেতু স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছে। আমাদের কৃষকদেরও আমরা স্মার্ট করে তুলতে পারি, যেন ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে কোনো দালাল না থাকে।
এক্সটার্নাল-১ : আমাদের কৃষকদের বেশির ভাগ শিক্ষিত না। তারা কি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে।
আমি : জি, স্যার। অবশ্যই পারবে। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের কৃষকরা অনেক জ্ঞানী। কারণ তাঁদের উত্পাদিত ফসলের কারণেই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের কৃষকদের কিছু প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এলেই তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট কৃষক হয়ে উঠতে পারবেন।
এক্সটার্নাল-২ : আপনার চয়েস লিস্টটা বলুন?
আমি : পুলিশ, প্রশাসন, ট্যাক্সেশন, কাস্টম অ্যান্ড এক্সাইজ, অডিট ও অ্যাকাউন্টস…।
এক্সটার্নাল-২ : বিসিএস পুলিশ কেন আপনার প্রথম চয়েস? তিনটা কারণ বলুন।
আমি : স্যার, প্রথম কারণ : দেশে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। নারীরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু একজন নারী তাঁর নির্যাতনের কথাগুলো একজন পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে মন খুলে বলতে পারেন না। আমি একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ওই সব ভুক্তভোগীর জন্য কাজ করতে চাই…।
দ্বিতীয় কারণ : আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনুযায়ী পুলিশের অনুপাত ৮০০ঃ১। কিন্তু আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী থাকার কথা ৪০০ঃ১…।
তৃতীয় কারণ : আমি পুলিশের মহিলা আইজিপি হতে চাই। স্বপ্নপূরণের জন্যই প্রথম পছন্দ পুলিশ।
এক্সটার্নাল-২ : কী করলে পুলিশের প্রতি জনসাধারণের ইতিবাচক ইমেজ বাড়বে?
আমি : পুলিশের সেবাগুলোকে আধুনিকায়ন ও অনলাইনভিত্তিক করতে হবে, যাতে মানুষ ঘরে বসেই সেবাটা গ্রহণ করতে পারে।
এক্সটার্নাল-২ : আপনি পুলিশের ডিউটি সম্পর্কে জানেন?
আমি : জি, স্যার। প্রয়োজন অনুসারে ২৪ ঘণ্টা।
এক্সটার্নাল-২ : আপনি তো মেয়ে মানুষ। এত ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন?
আমি : জি, স্যার। পারব।
এক্সটার্নাল-২ : আপনাকে যদি রাত ২টায় পার্বত্য এলাকায় একটি অপারেশনে যেতে বলা হয়। আপনি যাবেন? পরিবারের কোনো বাধা আসবে না?
আমি : আমি যেতে পারব। আমার পরিবার আমাকে সহযোগিতা করবে। আমার পরিবার থেকে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই।
চেয়ারম্যান : আপনি পুলিশ হলে কি শুধু নারীদের জন্য কাজ করবেন?
আমি : না, স্যার। আমি সবার জন্য কাজ করব।
চেয়ারম্যান : ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার—এই আন্দোলনের কথা শুনেছেন? আপনি এই আন্দোলনের পক্ষে, না বিপক্ষে?
আমি : আমি কোনো বর্ণবাদ, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষে বিশ্বাসী নই। আমি বিশ্বাস করি, সবাই মানুষ।
চেয়ারম্যান : গুড, এই আন্দোলনের নাম হওয়া উচিত হিউম্যান লাইভস ম্যাটার। তাহলে আজ থেকে আপনি নিজেকে নারী মনে করবেন না। একজন মানুষ মনে করবেন।
আমি : জি, স্যার।
চেয়ারম্যান : আপনার ভাইভা শেষ, আপনি আসতে পারেন।
আমি : আমার ডকুমেন্টস নিয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে বের হয়ে এলাম।
সূত্র: কালের কণ্ঠ