প্রিয় শেখ রাসেল রচনা ১০০ শব্দ থেকে ৬০০ শব্দ

স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে প্রিয় শেখ রাসেল রচনা (১০০ শব্দ থেকে ৬০০ শব্দ) দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেকোনো রচনা মুখস্ত না করে বুঝে পড়লে পরে পরীক্ষা নিজে থেকেই গুছিয়ে লিখতে পারবে। কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (যেমন সাল, পয়েন্ট) নোট করে রাখলে পরীক্ষার আগের দিন একবার দেখলেই কম সময়ে রিভিশন দেয়া সম্ভব হবে।

এই রচনা থেকে শিক্ষার্থী / প্রতিযোগীরা ১০০ শব্দ থেকে ৬০০ শব্দ যেভাবে সুবিধা রচনা তৈরি করতে পারবে।

 

রচনা : প্রিয় শেখ রাসেল / শেখ রাসেল / আমাদের শেখ রাসেল / শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু /

 

ভূমিকা

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। মাত্র ১১ বছর বয়সে, ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে, নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রাসেল। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো তার কর্মের দ্বারা বাঙালি জাতির ইতিহাসে উজ্জল অবদান রাখতেন। কারন তার সেই শিশু বয়সে তার ব্যক্তিত্বের মাধ্যমেই তার প্রকাশ করেছিলেন। তার কয়েক বৎসরের জীবন বাঙালি জাতির ইতিহাসকে এতই প্রভাবিত করেছেন, যে কখন তিনি বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের আসন থেকে, নেমে এসে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন।

 

 

শেখ রাসেলের জন্ম

শেখ রাসেলের জন্মেছিলেন ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে। দেশ তখন ভরা হেমন্তের গন্ধে আকুল হয়ে আছে দিক দিক। গ্রাম্য সভ্যতার রীতিতে তখন আমাদের দেশের ঘরে ঘরে তখন নতুন ফসল তোলার আনন্দ। এমনই এক আনন্দের দিনে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে মায়ের কোল আলো করে জন্ম নেন শেখ রাসেল। রাসেলের জন্ম হয়েছিল তার বড় বোন শেখ হাসিনার ঘরে।

রাসেলের জন্মের কিছুক্ষন পর, বড়বোন শেখ হাসিনা এসে, একটা ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন। জন্মের সময় রাসেল ছিলেন স্বাস্থ্যবান। তার জন্ম যেন শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবারেরই নয়, সমগ্র জাতির আনন্দ ছিল।

রাসেলের নামকরণ

শেখ রাসেলের নামকরণের পেছনেও রয়েছে একটি সুন্দর ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্বশান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষে এবং যুদ্ধের বিরোধী। এজন্য তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত ছিলেন। এমন বিখ্যাত ব্যক্তির নামের সঙ্গে মিল রেখে কনিষ্ঠ পুত্রের নাম শেখ রাসেল রাখেন বঙ্গবন্ধু।

 

রাসেলের ছেলেবেলা

রাসেলের ছেলেবেলা দেশের সমকালীন উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতোই বর্ণময়। জন্মের পর খুব বেশি সময় তিনি বাবার সান্নিধ্য পাননি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তৎকালিন পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে ঢাকায় রাখা হলেও পরে পাকিস্থানে স্থানান্তরিত করা হয়।

তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে। ১১ বছর বয়সে যখন তার নির্মম মৃত্যু হয়, তখন তিনি সেই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র।

নির্মম হত্যাকাণ্ড

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এর সেই অভিশপ্ত রাত সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। সেই রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে ট্যাংক দিয়ে ঘিরে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। সেইদিনই শেখ রাসেলকেও হত্যা করে হত্যাকারীরা।

কেন শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু?

শেখ রাসেল কেন আমাদের বন্ধু, কীভাবেই বা তিনি আমাদের বন্ধু হয়ে উঠলেন বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে রাসেলের ছেলেবেলার দিনগুলিতে। তার ছেলেবেলার দিনগুলো সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তার অধিকাংশই শিশু বয়সের নিষ্পাপ আত্মভোলা কর্মকাণ্ড। শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর বাসায় টমি নামে একটি কুকুর ছিল যার সাথে ছোট্ট রাসেল খেলে বেড়াতো। একদিন খেলার সময় কুকুরটি জোরে ডেকে উঠলে ছোট রাসেলের মনে হয় টমি তাকে বকেছে। শিশু রাসেল তার আপা রেহানার কাছে এসে কাঁদতে থাকেন।

জানা যায়, রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল। মাছ ধরে আবার সেই মাছ সে পুকুরেই ছেড়ে দিত। এই ছিল তার মজা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের জন্ম হলে রাসেল জয়কে নিয়ে খেলত সারাদিন। তার স্বভাব ছিল অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির। আর এই দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল একটি বাইসাইকেল।

রাসেলের শৈশব আখ্যান যেন আমাদের সকলের শৈশবের গল্প বলে দেয়। তার শৈশবের গল্প কথাগুলির মধ্যে আমরা যেন বারবার নিজেদেরই খুঁজে পাই। পড়াশোনা, খেলাধুলা, দুরন্তপনা এসব নিয়ে রাসেল আমাদের সকলের কাছেই হয়ে ওঠে শৈশবের এক মূর্ত প্রতিমূর্তি।

রাসেলের মধ্যে খুব ছোট বেলাতেই দেখ গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মতোই মানবিক বোধ। সব মানুষ সহ পশু পাখিদের জন্যও ছিলো তার অগাধ ভালোবাসা। সবার কাছে যেত, সবার সাথে মিশতো, বাড়িতে কাজের লোক সহ সবাইকে খুব সম্মান করতো।

উপসংহার

শেখ রাসেল বাঙালি জাতির কাছে এক যুগোত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব। বাঙালি জাতি তার মধ্যে খুঁজে পায় রূপকথার মতো নিজেদের ছেলেবেলাকে। শেখ রাসেলের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে আপামর বাঙালির শৈশব। অন্যদিকে তার নির্মম মৃত্যুর কাহিনী বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের দেশের করুন ইতিহাসের কথা।

তার স্মৃতিকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে গঠন করা হয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ। শেখ রাসেলের নামে রাজধানী ঢাকার বুকে নামাঙ্কিত হয়েছে একটি স্কেটিং স্টেডিয়াম। 

 

আরো পড়ুন : শেখ রাসেলকে নিয়ে কবিতা ও ছড়া সংগ্রহ