ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন মো.
আব্দুর রহমান শেখ। তিনি ৪১তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তার ভাইভা হয়েছিল
২০২৩ সালের মে মাসে। তার ভাইভা অভিজ্ঞতার গল্প শুনেছেন আব্দুন নুর নাহিদ
বেল বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে বললাম, ‘স্যার, আসতে পারি?’ অনুমতি পাওয়ার পর ভাইভারুমে
প্রবেশ করে সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিলাম। এরপর চেয়ারম্যান স্যার সালামের উত্তর দিয়ে চেয়ারে
বসতে বললেন। ভাইভারুমে চারজন ছিলেন। বিশাল রুমের তিন কোনায় তিনটি টেবিলে তিনজন বসেছিলেন।
একজন অতিথি চেয়ারম্যান স্যারের পাশে বসেছেন। আমি বর্তমানে কোথায় চাকরি করি, কোথায়
থাকি—শুরুতে এসব জানতে চাইলেন চেয়ারম্যান স্যার।
চেয়ারম্যান : আপনার পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন কবে শেষ হয়েছে?
আমি : স্যার, ২০২২ সালের আগস্টে ফল প্রকাশিত হয়েছে।
এটি কি আপনার প্রথম বিসিএস?
—জি, স্যার।
আপনি তো বিসিআইসিতে আপনার বিষয়সংশ্লিষ্ট ভালো চাকরিতে আছেন, বিসিএসে আসতে চান কেন?
—স্যার, বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিসিএস আমার নিজের আগ্রহ ও সমাজের গ্রহণযোগ্যতা
দুটিই একসঙ্গে পূরণ করে।
মনে করেন, কিছুদিন পরে দেখলেন সিভিল সার্ভিসের চেয়ে ভালো কোনো সুযোগ আপনার সামনে চলে এলো।
তখন কি ছেড়ে দেবেন?
—স্যার, আমার পক্ষে এই মুহূর্তের উত্তর দেওয়া সম্ভব এবং উত্তর হলো ‘না’। আমার ছাত্রজীবনের
পরবর্তী সময়ের সব আকাঙ্ক্ষা দিয়ে চেয়েছি সিভিল সার্ভিসে সুযোগ পেতে।
আচ্ছা, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা সবাই বিসিএসের দিকে ঝুঁকছে কেন? এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
—স্যার, এখানেও আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার একটি বড় ভূমিকা আছে। বর্তমানে ডাক্তার বা
ইঞ্জিনিয়াররা মনে করেন, তাদের যে সম্মান পাওয়া উচিত, সমাজ তাদের সে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারছে
না। বরং প্রথম সারির বিসিএস ক্যাডাররা সমাজে বেশি সমাদৃত হচ্ছেন।
আপনার পছন্দের ক্যাডার তালিকার সিরিয়াল বলুন।
—স্যার, বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্সেশন, কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ… (চারটি বলার পর থামিয়ে
দিলেন)।
এক্সটার্নাল-১ : আমরা যে বাইরে থেকে অপরিশোধিত তেল কিনে আনি, এটি কিভাবে রিফাইন করা হয়?
—‘ফ্রাকশনাল ডিস্টিলেশন’-এর মাধ্যমে।
ফ্রাকশনাল ডিস্টিলেশন কলামের সর্বনিম্ন স্তর থেকে কী পাওয়া যায়?
—বিটুমিন, স্যার। (এরপর এলএনজি টার্মিনাল, বাপেক্স, পেট্রোবাংলা এবং এদের কার্যক্রম নিয়ে বেশ
কিছু প্রশ্ন করা হয়। ওই সময় পত্রিকায় বাপেক্সের কূপ খননের ব্যর্থতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত
হয়েছিল।)
চেয়ারম্যান : বাংলাদেশে মজুদ গ্যাস তো কমে আসছে, কিছুদিন পর হয়তো শেষ হয়ে যাবে, তখন কী হবে?
(উত্তরে এলএনজি আমদানি ও সমুদ্রে গ্যাস ব্লক অনুসন্ধানের কথা বলায় আরো কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন
করেন।)
এক্সটার্নাল-২ : বলুন তো, একটি বিন্দু আর রেখার মধ্যে পার্থক্য কী?
—স্যার, একটি বিন্দুকে এক্সপান্ড করলে রেখা পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো—বিন্দু জিরো
মাত্রার এবং রেখা এক মাত্রার।
বিন্দুর যেহেতু কোনো মাত্রা নেই, তাহলে বিন্দু থেকে কি ত্রিমাত্রিক কোনো বস্তু আঁকা যাবে?
—জি, স্যার। প্রতিটি ত্রিমাত্রিক বস্তুর একটি অবস্থান থাকে, যেটি মূল বিন্দু (০, ০, ০)। এখান থেকেই
বস্তুর সূচনা হয়।
আচ্ছা, মনে করুন—কক্সবাজারে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি সম্মেলন হচ্ছে। সেখানে
আপনি বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে একটি ভাষণ দিচ্ছেন। এমন বক্তব্য দেবেন, যাতে বিদেশি
পর্যটকরা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হয়।
(আমি এটি শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই। ইংরেজিতেই দু-তিন মিনিট ভাষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যদিও
আমি ইংরেজি কথোপথনে সাবলীল না।)
আপনি যে বাংলাদেশের পর্যটন স্পট নিয়ে এত কিছু বললেন, বিদেশিরা এসে যখন দেখবে আপনার কথার
সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই, তখন দেশের সুনাম নষ্ট হবে না?
—স্যার, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বের যেকোনো
প্রান্তের মানুষ এই সৌন্দর্যে অভিভূত হতে বাধ্য! হয়তো কিছু স্থানের নিরাপত্তা ও যোগাযোগব্যবস্থা
বিশ্বমানের নয়। এটি নিয়ে কিছু অভিযোগ থাকতে পারে। তাই আমি মনে করি না আমার এই কথায় দেশের
সুনাম নষ্ট হবে।
‘চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স’ টার্মটি বুঝিয়ে বলুন।
—কোনো ডিপ্লোমেটিক মিশনে অ্যাম্বাসাডর বা হাইকমিশনারের অনুপস্থিতিতে যিনি দায়িত্ব পালন করেন,
তাঁকেই চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলা হয়।
(এটিই ছিল শেষ প্রশ্ন। আমি কাগজপত্র নিয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে বের হয়ে আসি।)