রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ইল্লিন মুরশিদ। ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। ভাইভা বোর্ডে ছিলেন ২২ মিনিটের মতো। তাঁর ভাইভার অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন আব্দুন নুর নাহিদ
অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সালাম দিলাম। চেয়ারম্যান স্যার সালাম নিয়ে বসতে বললেন।
চেয়ারম্যান : আপনার নামটা ব্যতিক্রম, ‘ইল্লিন’ অর্থ কী?
আমি : ইল্লিন হচ্ছে বেহেশতের একটা জায়গা, মৃত্যুর পরে যেখানে ভালো রুহ বা আত্মাকে রাখা হয়।
ইল্লিনের বিপরীত হচ্ছে সিজ্জিন, তাই তো?
—জি স্যার।
আপনি কি বর্তমানে কিছু করছেন?
—জি স্যার, আমি বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছি।
কত দিন থেকে জব করছেন?
—দুই বছরের কিছু বেশি।
শুধু বিসিএসের আশায় না থেকে চাকরি করছেন, এটা ভালো। এখন বলুন, সরকার কৃষকদের কোন কোন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিচ্ছে?
—সার, কীটনাশক, বীজ, সেচ।
এসব কাজ আপনারা করেন, তাই তো?
—না স্যার, এসব কাজ মূলত কৃষি অফিস করে থাকে।
তাহলে আপনারা কী কাজ করেন?
—স্যার, আমরা মূলত কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে থাকি। প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষক খুব সহজে আমাদের কাছ থেকে লোন সুবিধা পান। এ ছাড়া কৃষকদের জন্য ১০ টাকা দিয়ে কৃষি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যাতে তাদের ফিন্যানশিয়াল ইনক্লুশনের মধ্যে নিয়ে আসা যায়। এর বাইরে অন্যান্য ব্যাংকের মতো সব সুবিধাই আমরা দিই।
একজন কৃষক কত দিনের মধ্যে আপনাদের থেকে লোন পায়?
—সাধারণত তিন কর্মদিবসের মধ্যে।
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষকদের থেকে কী ধরনের কাগজপত্র নেওয়া হয়?
—স্যার, ভূমিহীন কৃষক থেকে কোনো কাগজপত্র নেওয়া হয় না। তবে অন্যান্য কৃষি লোনের ক্ষেত্রে লোন পরিশোধের নিশ্চয়তার জন্য কিছু কাগজপত্র রাখা হয়।
প্রবাসী সরকার কবে গঠিত হয়?
—১০ এপ্রিল ১৯৭১।
কোথায়?
—মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা, বর্তমান নাম মুজিবনগর।
প্রবাসী সরকার গঠনের প্রয়োজন হলো কেন?
—স্যার, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। বাংলার আপামর জনতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হওয়ার ফলে বহির্বিশ্বের সহায়তা ও সহযোগিতা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আমাদের সরকার গঠনের প্রয়োজন হয়। যাতে অন্যান্য দেশের সরকার আমাদের দেশের সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে।
আচ্ছা, প্রবাসী সরকারের বৈধতা কী? চাইলেই কি যে কেউ সরকার গঠন করতে পারে?
—স্যার, তারা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দেয়নি। যেহেতু তারা নির্বাচিত, তাই তারা বৈধতা পেয়েছে।
এক্সটার্নাল-১ : একবাক্যে ইতিহাসের সংজ্ঞা দিন।
—সত্য প্রকাশের নিমিত্তে পরিকল্পিত অনুসন্ধান হলো ‘ইতিহাস’।
আপনার ডিপার্টমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কে?
—স্যরি স্যার, নামটা মনে করতে পারছি না, তবে তিনি প্রবাসী সরকার নিয়ে বই লিখেছেন।
অনার্সে পঠিত পাঁচটি ইংরেজি বইয়ের নাম ও লেখকের নাম?
—উত্তর দেওয়ার পর স্যার অনেক খুশি হলেন।
ক্রিমিয়া যুদ্ধ কত সালে হয়?
—স্যার, ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬ সালে।
কার কার মধ্যে?
—রাশিয়া ও ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অটোমান সাম্রাজ্যের বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।
সম্প্রতি কখন ক্রিমিয়া সংকট দেখা দেয়?
—২০১৪ সালে, স্যার।
What is monetary policy?
– Sir, monetary policy is a policy adopted by Bangladesh Bank to control money market in our country.
এক্সটার্নাল-২ : লালন শাহ কে?
—স্যার, বাউল সাধক।
বাংলা সাহিত্য তাঁর অবদান কী? রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে লালন শাহের তুলনা করেন?
—স্যার, লালন শাহ ছিলেন লালনসংগীত তথা বাউলগানের জনক আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ।
কয়টি দেশের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন?
—স্যার, তিনটি। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কার।
আমাদের রণসংগীত কে রচনা করেন?
—স্যার, কাজী নজরুল ইসলাম।
(আরো কয়েকটি সহজ প্রশ্ন করে চেয়ারম্যান স্যার বললেন—আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার ভাইভা শেষ। আপনি আসুন। আমি কাগজপত্র নিয়ে সালাম দিয়ে বের হয়ে এলাম।)
সূত্র: কালের কণ্ঠ