গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) মো. ফাহিম সিকদার। পড়াশোনা করেছেন চুয়েটে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই)। ৪১তম বিসিএসে গণপূর্ত ক্যাডারে মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছেন তিনি। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন রবিউল আলম লুইপা
ভাইভার তারিখ : ৮ জুন ২০২৩।
ক্যাডার পছন্দক্রম : প্রশাসন, পুলিশ, আনসার, গণপূর্ত।
ভাইভার সময়কাল : ১৫ মিনিট।
দরজা খুলে অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। সালাম দিলাম। বসতে বললেন, ধন্যবাদ দিয়ে বসলাম।
চেয়ারম্যান : মাস্ক খুলে টেবিলে রাখো। আচ্ছা, তুমি একজন প্রকৌশলী, এখন কি কিছু করছ?
আমি : জি স্যার, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে কর্মরত।
অ্যাডমিন ক্যাডার তোমার প্রথম পছন্দ! একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ হওয়া উচিত?
—সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের সেবা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির কর্তব্য। সুতরাং একজন সরকারি কর্মচারীর আচরণ হতে হবে জনবান্ধব।
তুমি কি মনে করো, তোমার পক্ষে এমন (জনবান্ধব) আচরণ সম্ভব?
—অবশ্যই স্যার, আমি মনে করে আমাকে দিয়ে হবে।
একজন বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেকে গর্বিত মনে করার পাঁচটি কারণ বলো।
—১. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় অর্জন।
২. খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ।
৩. জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সেনা প্রেরণ।
৪. ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র বিজয়।
৫. বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উেক্ষপণ।
আইন প্রণয়ন কিভাবে করা হয়?
—সংসদে যেকোনো প্রস্তাব বিল আকারে উত্থাপিত হয়। সংসদ সদস্যদের সম্মতি ও রাষ্ট্রপতির স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে আইন পাস হয়।
সংসদে উত্থাপিত হওয়ার আগে কারা এটা (আইন) বানায়?
—পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় (ভুল উত্তর শুনে চেয়ারম্যান স্যার বললেন, কোথায় পেয়েছ এই উত্তর? এক্সটার্নাল স্যারের দিকে তাকিয়ে উনাকে প্রশ্ন করতে বললেন। আসলে সঠিক উত্তর হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। অর্থাত্ ক্যাবিনেট অনুমতি দেওয়ার পর যে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিল উত্থাপন করা হয়, সেই মন্ত্রণালয়কে বিলটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আরো কিছু প্রক্রিয়া আছে।)
এক্সটার্নাল-১ : কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছ?
—চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ওয়ালটন সম্পর্কে কী জানো?
—দেশের অন্যতম ইলেকট্রনিকস পণ্যসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তারা মূলত বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ কিনে এনে দেশে সংযোজন বা অ্যাসেম্বেল করে।
তারা কি কোনো পার্টস বানায় না? তারা কি কোনো পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে?
—স্যার, আমার জানা মতে তারা কম্প্রেসর বানায়। (একটু সময় নিয়ে) জি স্যার, রপ্তানি করে।
এত সময় নিয়ে উত্তর দিয়েছ কেন? পত্রিকা পড়ো না? এসব তো পত্রিকা পড়লেই জানা যায়। বর্তমান বিদ্যুত্ সংকটের মূল কারণ কী?
—আমদানিনির্ভর জ্বালানি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা।
এটার কি কোনো সমাধান আছে?
—বিদ্যুত্ উত্পাদনে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো, পরিকল্পিত বিদ্যুত্ ব্যবস্থাপনা ও নবায়নযোগ্য শক্তি বা এনার্জির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। (স্যার এবার দ্বিতীয় এক্সটার্নাল স্যারকে প্রশ্ন করার অনুরোধ করেন)
এক্সটার্নাল-২ : জাতীয় আমদানি-রপ্তানি নীতি সম্পর্কে ধারণা আছে?
—দুঃখিত স্যার, ধারণা নেই।
আচ্ছা, তুমি যেহেতু প্রকৌশলী, তোমাকে একটা টেকনিক্যাল প্রশ্ন করি। বর্তমানে যে বিদ্যুত্ সংকট, সেটা সৌরশক্তি (সোলার এনার্জি) দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব?
—না স্যার, সম্ভব নয়। আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য যে বিদ্যুত্ প্রয়োজন হয়, সে পরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য অনেক বড় জায়গাজুড়ে সোলার প্যানেল বসাতে হবে। তা ছাড়া এই সোলার প্যানেলগুলো কিনতে হবে বিদেশ থেকে। এর ফলে আমাদের আমদানি নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে।
এসব তো সাধারণ কথাবার্তা। প্রকৌশলী হিসেবে তোমার কাছ থেকে আরো ভালো উত্তর চাচ্ছি।
—(একটু ভেবে) সোলার থেকে আমরা যে বিদ্যুত্ পাই, তা ডিসি (ডিরেক্ট কারেন্ট)। এই ডিসিকে স্টোর করার জন্য ব্যাটারি লাগে। আবার আমাদের ব্যবহার্য বিদু্যুত্ চাহিদা এসি (অল্টারনেটিং কারেন্ট)। সুতরাং এই উত্পাদিত ডিসি বিদ্যুেক ব্যাটারিতে জমা রেখে পুনরায় সেখান থেকে এসি বিদ্যুতে পরিণত করতে কনভার্টার লাগে। ফলে প্রক্রিয়াটি জটিল ও ব্যয়বহুল।
চেয়ারম্যান : তোমার কাগজপত্র নিয়ে যাও।
(আমি সালাম দিয়ে বেরিয়ে এলাম।)
সূত্র: কালের কণ্ঠ