দেশের প্রথম মনোরেল প্রকল্প চট্টগ্রামে | চলবে ৩ রুটে, চুক্তি সই

দেশের প্রথম মনোরেল প্রকল্প চট্টগ্রামে | চলবে ৩ রুটে, চুক্তি সই

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মনোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। যানজট নিরসন ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির ওরাসকম এবং মিশরের আরব কন্ট্রাক্টরস গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে চসিক।

রোববার সকালে চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, দুই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি।

মনোরেল প্রকল্পের ৩টি প্রস্তাবিত রুট

চুক্তি অনুযায়ী, ওরাসকম ও আরব কন্ট্রাক্টরস যৌথভাবে মনোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই (Feasibility Study) করবে। সফল হলে, প্রকল্পটি Public-Private Partnership (PPP) মডেলে বাস্তবায়ন হবে।

প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত রুটগুলো হল:

  • লাইন ১: কালুরঘাট → বিমানবন্দর (২৬.৫ কিমি), পথে বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা।

  • লাইন ২: সিটি গেট → শহীদ বাশিরুজ্জামান স্কয়ার (১৩.৫ কিমি), এ.কে. খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার।

  • লাইন ৩: অক্সিজেন → ফিরিঙ্গি বাজার (১৪.৫ কিমি), মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালি।

পুরোপুরি বিদেশি বিনিয়োগে বাস্তবায়ন

চসিক মেয়র জানান, এই প্রকল্পে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিদেশি দুই কোম্পানি। চসিক শুধুমাত্র ভূমি ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবে। এতে স্থানীয় সরকারের কোনো আর্থিক দায় থাকবে না।

মেয়র বলেন, “এই মনোরেল শুধু যানজট কমাবে না; বরং এটি চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও পর্যটনবান্ধব নগরীতে রূপান্তর করবে।”

মনোরেল প্রযুক্তির সুবিধা

চসিক কর্মকর্তারা জানান, মনোরেল একটি আধুনিক গণপরিবহন প্রযুক্তি, যা সাধারণত উঁচু পিলারের ওপর দিয়ে চলে। এটি মেট্রোরেলের তুলনায় প্রায় ৪০% খরচ সাশ্রয়ী এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও সহজে নির্মাণযোগ্য।
বিশ্বের অনেক দেশে, যেমন জাপান, চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারত, এই প্রযুক্তি ইতোমধ্যে সফলভাবে চালু আছে।

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বক্তব্য

ওরাসকম-আরব কন্ট্রাক্টরস কনসোর্টিয়ামের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী বলেন,
“চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে যানজট ও পরিবহন সংকট মারাত্মক। মনোরেল একটি টেকসই সমাধান।”
তিনি আরও বলেন, “রাজস্ব কেবল টিকিট বিক্রিতেই নয়; বরং স্টেশন এলাকায় দোকান, বিজ্ঞাপন এবং আশপাশের জমির মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমেও আয় হবে।”

সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া

গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এই মনোরেল প্রকল্প চট্টগ্রামকে একটি স্মার্ট ও টেকসই নগরীতে রূপান্তর করবে। আমরা নাগরিক সমাজ এই উদ্যোগকে পূর্ণ সমর্থন জানাই।”

পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২১ সালেও কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান মনোরেলের প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এবারের উদ্যোগ সফল হলে, এটি বাংলাদেশের গণপরিবহন খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে এবং চট্টগ্রাম নগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

Rate This Article

How would you rate this article?

Edu Daily 24
Edu Daily 24 Senior Reporter

Experienced writer with deep knowledge in their field.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.