আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন pdf | সংগঠনটির রাজনৈতিক ইতিহাস

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ১২ মে ২০২৫ তারিখে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন এরই মধ্যে হয়ে গেছে। অধ্যাদেশ অনুসারে বিষয়টি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের।
এর আগে শনিবার (১০ মে) রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। তখন জানানো হয়েছিল, পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যেহেতু গতকাল বৌদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি ছিল এজন্য আজ প্রথম কার্যদিবসেই জারি হলো প্রজ্ঞাপন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পালিয়ে যান ভারতে। এরপর থেকে দলটি কার্যত অস্তিত্বহীন। ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নেতাদের অনেকেই বিদেশে পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। বেশির ভাগ নেতা দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছেন।
এই প্রজ্ঞাপন বা গেজেট পাওয়া যাবে এই লিংকে: https://www.dpp.gov.bd/bgpress/bangla/index.php/home/download_file/gazettes/57493_68017.pdf
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন, তৎকালীন পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার রোজ গার্ডেনে (বর্তমানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ)। এই দলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
প্রাথমিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ব বাংলার জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। দলটি ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়।
ভাষা আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রতিষ্ঠা করে। এই আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি তৈরি করে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার ইতিহাস
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে সামরিক শাসন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাপ ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন।
১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করা হয়। এরপর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
নিষিদ্ধের কারণ
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা সামরিক-বেসামরিক গোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে দমন করতে চেয়েছিল।
দলটিকে “একদলীয় শাসনের প্রতীক” হিসেবে চিহ্নিত করে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জিয়াউর রহমানের আমলে আওয়ামী লীগের অবস্থান
১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন। আওয়ামী লীগ আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসে, তবে দলটি তখন অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
১৯৮২ সালে এরশাদ সরকারের আমলে দমন-পীড়ন
১৯৮২ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করলে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞা আসে। দলটি আবারও গোপনে কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হয়।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান
১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র ফিরে আসে। আওয়ামী লীগ পূর্ণ শক্তিতে রাজনীতি শুরু করে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এরপর থেকে দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।