খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা : শিক্ষক–শিক্ষার্থী আহত

খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা : শিক্ষক–শিক্ষার্থী আহত
খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা : শিক্ষক–শিক্ষার্থী আহত

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ ও ১৪ নভেম্বর টানা দুই দিনের সহিংসতায় পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইন ও বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার উত্তেজনা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা, প্রশাসনের ভূমিকা এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট ম্যাচ শেষে বিবিএ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আহতদের যমুনা হলে নেওয়ার সময় বিবিএ বিভাগের আরেকদল শিক্ষার্থী হলের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আইন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, বর্তমান বিভাগীয় প্রধান এবং লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক মো. রুবেল হোসেন গুরুতর আহত হন। শিক্ষকদের ওপর এ হামলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে চরম নিন্দনীয় ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এরপর ১৪ নভেম্বর শুক্রবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও বিতর্ক সপ্তাহ–২০২৫-এর বিভিন্ন কার্যক্রমে বিবিএ বিভাগের একটি অংশ বাধা সৃষ্টি করে, ফুটবল ফাইনাল বানচাল করার চেষ্টা করে এবং সিএসই ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের দাবি—এসবই ছিল পরিকল্পিত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অংশ।

সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় বেলা ১২টার দিকে মুক্তমঞ্চ এলাকায়, যেখানে ইংরেজি ও আইন বিভাগের যৌথ বিতর্ক প্রতিযোগিতা চলছিল। হঠাৎ বিবিএ বিভাগের একদল শিক্ষার্থী আইন বিভাগের অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে দুইজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ধাক্কাধাক্কি ও আঘাতের শিকার হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু শিক্ষক তাৎক্ষণিক কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি—এমন অভিযোগও উঠেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিবিএ ফ্যাকাল্টির কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উদাসীনতাই পরিস্থিতিকে আরও অবনতি ঘটিয়েছে।

এছাড়া হামলাকারীরা যমুনা হলে ঢুকে বিভিন্ন বিভাগের অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচার মারধর চালায়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপে হলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আহতদের উদ্ধার করতে গেলে অন্য শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন ঘটনাস্থলে থাকলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি, বরং নীরব ভূমিকা পালন করেছে।

১৪ নভেম্বরের হামলায় বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহাদ, সিফাত মল্লিক, আল-রাজি ইয়াস, মাহমুদুল, ইফতি, আশিক, রামিম, ইয়ামিন ও সাদের বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

হামলার পর গুরুতর আহত দুইজনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আইন বিভাগ, যমুনা হল এবং বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্রুত দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কার, আহতদের পূর্ণ চিকিৎসা সহায়তা, এবং ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা জ্ঞান, যুক্তি ও মানবিকতার স্থান—সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার নয়। টানা দুই দিনের এই সহিংসতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।

Rate This Article

How would you rate this article?

ED Desk
ED Desk Staff Reporter

Experience in write about 5 years.

Our Editorial Standards

We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.

Fact-Checked

This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.

Expert Review

Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.

Regularly Updated

We regularly update our content to ensure it remains current.

Unbiased Coverage

We strive to present balanced information.