মো. শরীফুল ইসলাম ফিন্যান্সে বিবিএ- এমবিএ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ভাইভা অভিজ্ঞতা শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
আমার ক্যাডার পছন্দক্রম ছিল যথাক্রমে বিসিএস পররাষ্ট্র, প্রশাসন, শুল্ক ও আবগারি, কর, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং পুলিশ। ভাইভার জন্য নির্ধারিত দিনে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভাইভা বোর্ডের দিকে যাওয়ার সময় জানতে পারলাম, আগের বিসিএসে যে স্যারের বোর্ডে ভাইভা দিয়ে নন-ক্যাডার পেয়েছিলাম, সেই স্যারের বোর্ডেই ভাইভা হবে। ভাইভা বোর্ডে আমার সিরিয়াল ছিল প্রথমেই। যথারীতি সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলাম, স্যার বসতে বললেন এবং মাস্ক খুলে রাখতে বললেন।
চেয়ারম্যান কাগজপত্র দেখতে দেখতে বললেন, ‘আপনি পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম চয়েস দিয়েছেন, ধরে নিলাম আপনি অনেক জানেন, অনেক পড়াশোনা করেন। নিয়মিত পত্রিকা পড়েন?’
আমি : জি স্যার, চেষ্টা করি।
চেয়ারম্যান : আপনি ফিন্যান্সে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক পিএলসি লাগাচ্ছে নামের শেষে। এটা কেন, বলতে পারবেন?
আমি : আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে ব্যাংক কম্পানির নাম পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়েছে। ১৯৯৪ সালের কম্পানি আইন দ্বিতীয়বারের মতো ২০২০ সালে সংশোধন করে কয়েকটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সেটির আলোকে প্রজ্ঞাপন জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকে সেটি পাঠিয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য। ওই সার্কুলারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কম্পানি আইনের ধারা ১১-এর ক অনুযায়ী সীমিত দায় পাবলিক কম্পানির ক্ষেত্রে কম্পানির নামের শেষে ‘পাবলিক সীমিত দায় কম্পানি’ বা সংক্ষেপে পিএলসি লিখতে হবে আর কম্পানি আইনের ধারা ১১-এর খ অনুযায়ী সীমিত দায় প্রাইভেট কম্পানির ক্ষেত্রে কম্পানির নামের শেষে ‘সীমিত দায়’ বা সংক্ষেপে এলটিডি লিখতে হবে, স্যার। এই নির্দেশনা পরিপালন করার ক্ষেত্রে ব্যাংক কম্পানির নাম ও মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন বা সংঘস্মারকও পরিবর্তন করতে হবে, স্যার।
চেয়ারম্যান : পাবলিক লিমিটেড কম্পানির শেয়ারবাজারে ট্রেডিং হয়?
আমি : নো, স্যার।
চেয়ারম্যান : এটা কী বললেন আপনি! (স্যার আশ্চর্য হলেন। আসলে আমি শুনতে পেয়েছিলাম প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানি)।
আমি : (পাবলিক লিমিটেড কম্পানি বলায় উত্তর সংশোধন করলাম)।
চেয়ারম্যান : আরব লীগ কেন উত্পত্তি হয়েছিল?
আমি : নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারস্পরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৪৫ সালে আরব লীগ গঠিত হয়।
চেয়ারম্যান : আরব লীগের বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত?
আমি : এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। (আমি প্রস্তুতির সময় আরব লীগকে বেশি প্রাসঙ্গিক মনে করিনি, ওআইসিকে বেশি প্রাসঙ্গিক মনে করেছিলাম ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে)।
চেয়ারম্যান : পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র কাকে বলে?
আমি : আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নয়, তবে সদস্য হতে আগ্রহী সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন স্বীকৃত কিছু দেশকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র বলে।
চেয়ারম্যান : আরব লীগের একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের নাম বলেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ।
আমি : ভারত, স্যার।
চেয়ারম্যান : ভারত কেন আরব লীগের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র? কারণগুলো বলুন।
আমি : স্যার, ভারত আরব সাগরের তীরবর্তী একটি দেশ। ভারতের প্রচুর জনশক্তি আরব দেশগুলোতে কাজ করে, কৃষ্টি-কালচারেরও অনেক ক্ষেত্রে মিল আছে। তাই ভারতকে আরব লীগের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র করা হয়েছে...।
চেয়ারম্যান : রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশ কিভাবে সমাধান করবে?
আমি : রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যমান বড় সমস্যাগুলোর একটি। আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যু নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, কূটনীতিক বহুমুখী উদ্যোগ, ভারত, চীন, জাপানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। জাতিসংঘ ও পরাশক্তি দেশগুলোরও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে এ ক্ষেত্রে।
চেয়ারম্যান : চীন কিভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে?
আমি : চীন বাংলাদেশের অদূরবর্তী দেশ এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশেই চীনের বিনিয়োগ রয়েছে এবং চীনের প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীনকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে মিয়ানমারে চীনের প্রভাব কাজে লাগানো যেতে পারে, স্যার।
(এরপর কিছু ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন, আমি সেগুলোর উত্তর ইংরেজিতেই দিয়েছি। প্রশ্নগুলো পর্যায়ক্রমে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।)
এক্সটার্নাল-১ : What is preferred share?
What is difference between preferred stock and common stock?
What is agency conflict?
Why agency cost arises?
Differentiate between profit maximization and wealth maximization?
Which do you prefer?
এক্সটার্নাল-২ : মুক্তিযুদ্ধের আগের বিভিন্ন ঘটনা বলেন।
আমি : ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশ হয়। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে...।
এক্সটার্নাল-২ : পাকিস্তান অংশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সালগুলো বলেন এবং ঘটনা?
আমি : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
চেয়ারম্যান : যুক্তফ্রন্টের দলগুলোর নাম বলেন।
আমি : মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক-শ্রমিক পার্টি, মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম, হাজী দানেশের বামপন্থী গণতন্ত্রী দল।
এক্সটার্নাল-২ : মুক্তিযুদ্ধের মার্চ মাসের ঘটনাগুলো বলেন। আচ্ছা থাক, ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি কবে পাওয়া গেছে?
আমি : স্যার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে ইউনেসকো ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়।
চেয়ারম্যান : আচ্ছা, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা এক্সাক্টলি কখন দেওয়া হয়?
আমি : স্যার, ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২টার অল্প কিছুক্ষণ পর।
এক্সটার্নাল-২ : দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের পদক্ষেপ বলেন।
(আমি বিস্তারিত বললাম)
এক্সটার্নাল-২ : আপনি তাহলে আসতে পারেন।
(আমি সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে আমার কাগজপত্র নিয়ে বের হয়ে এলাম)।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
ভাইভা প্রশ্ন : রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশ কিভাবে সমাধান করবেন?
Content Freshness & Accuracy
Verified
Published
Aug 7, 2025
Updated
Sep 21, 2025
Next Review
Mar 22, 2026
Our Freshness Pledge
We commit to regularly reviewing and updating our content to ensure it remains accurate, relevant, and trustworthy.
Learn About Our Review Process
Advertisement
Our Editorial Standards
We are committed to providing accurate, well-researched, and trustworthy content.
Fact-Checked
This article has been thoroughly fact-checked by our editorial team.
Expert Review
Reviewed by subject matter experts for accuracy and completeness.
Regularly Updated
We regularly update our content to ensure it remains current and relevant.
Unbiased Coverage
We strive to present balanced and unbiased information.